ভারতের এই নিষিদ্ধ দ্বীপে কেউ যেতে পারে না কেন জানেন!
প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক,১৯ জুলাই: ভারতবর্ষের এমন এক জায়গা, যেখানে মানুষেরা আজও আদিম যুগের মতোই জীবন যাপন করে। খাবারের জন্য শিকার করে এবং গা ঢাকার জন্য ব্যবহার করেন গাছের ছাল বা পাতা এবং গোটা পৃথিবীতে খুব কম সংখ্যক মানুষই আছে যারা ঐ দ্বীপে গিয়ে বেঁচে ফিরেছেন। দ্বীপটির নাম হল নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপ।
ভারতবর্ষে এটি এমন একটি দ্বীপ যেখানে যাওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ব্রিটিশ আমল থেকে যখনই বিজ্ঞানীরা সেই দ্বীপে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রত্যেকবার তাদের উপর হামলা হয়েছে, তীর ধনুক নিয়ে এগিয়ে এসেছিল তারা। কিন্তু জানলে অবাক হবেন ওই দ্বীপে ওখানকার মানুষের সাথে যোগাযোগ করে,কথা বললে ওদের খাবার দিয়ে সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসা প্রথম ব্যক্তি হল একজন বাঙালি মহিলা। ওনার নাম মধুবালা চট্টোপাধ্যায়। মধুবালা দেবী ১৯৯১ সালে তার টিমের সাথে রিসার্চ করতে গিয়েছিলেন সেই দ্বীপে এবং সেই দ্বীপে মানুষের সাথে যোগাযোগ করে ফিরে এসে লিখেছিলেন এক বই যার নাম “ট্রাইবস অফ কার নিকোবর”। এই ট্রাইবাল প্রজাতিকে এনথ্রপলিজস্ট্রা নাম দিয়েছেন নর সেন্টিনালিন ট্রাইবাল। তাদের মধ্যে খুব সম্ভবত ৩০০০০ বছর আগে আফ্রিকা থেকে ভারতে এসছিল এবং তারপর তারা এখানেই থেকে যায়। নিজেদেরকে গোটা পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে নেয় বাইরে জগত থেকে যখন কেউ তাদের সাথে যোগাযোগ করতে এসছে তখন তারা তীর ধনুক নিয়ে আক্রমণ করেছিল।
তিলোকনাথ পন্ডিত প্রথম ১৯৬৭ সালে এই আইল্যান্ডের কাছে যাবার চেষ্টা করেছিলেন, সাথে কিছু নারকেল একটি জ্যান্ত শুকর এবং কিছু ফলমূল আর জামাকাপড় নিয়ে ওই আয়ারল্যান্ডের তীরে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু খুব অদ্ভুতভাবে সেই দ্বীপের লোকেরা তাদের কোন খাওয়ারই নেন নি তবে ওই শূকরকে তারা ওখানেই মেরে বালি চাপা দিয়ে দেয়।
তিলোকনাথ পন্ডিত তার লেখা বই “ দ্য সেন্টিনালিনস ”এ দেখেছেন এখানকার মানুষেরা চাষ করতে জানে না। তারা প্রকৃতির উপরেই পুরোপুরি নির্ভরশীল। গাছের ফলমূল থেকে শুরু করে মাছ এবং জন্তু জানোয়ার স্বীকার করেই তারা খায়। তিলোকনাথ পণ্ডিত বহু ভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন একবার তার টিমকে নিয়ে গেছিলেন সেই দ্বীপে একটি ডকুমেন্টারি সুটের জন্য ইন্টারনেট যে হাতেগোনা যেসব ভিডিও বা ফটোস আছে সেই সুট থেকেই নেওয়া হয়েছে সেই দ্বীপে পৌঁছানোর আগেই তীর ছুটছিলেন সেন্টিনালরা। কিন্তু ১৯৯১ সালের যখন মধুবালা চট্টোপাধ্যায় তার টিম নিয়ে সেখানে যান তখন ঘটে একটা অবাক কান্ড। মধুবালা চট্টোপাধ্যায়ের দিকে কোন তীর ধেয়ে আসেনি উল্টে খুব ভালোভাবে স্বাগত জানায় তাকে। এর পেছনে একটা কারণ হতে পারে যে তিনিই প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি একজন মহিলা। সেই কারণেই হয়তো সেনান্ডার তার দিকে কোন আক্রমণ করেননি।
মধুবালা তবে একবার নয় দু-তিন বার তাদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। এইজন্য ১৯৯১ সালের মধ্যব্রতা চট্টোপাধ্যায় এবং তিলোকনাথ পন্ডিত একসঙ্গে তাদের টিম নিয়ে সেই দ্বীপে পৌঁছায় এবং সেখান থেকে সফল হয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এটি শেষবার ছিল যখন তাদের কাছ থেকে এমন ফ্রেন্ডলি বিহেভিয়ার দেখা যায় কারণ তারপর থেকে ওই দ্বীপে যেই যাওয়ার চেষ্টা করেছেন সেন্টিনালিনরা তারা আবার তীর ধনুক নিয়ে ধেয়ে এসেছে। অনেক সময় এমনও হয়েছে আকাশে কোনও হেলিকপ্টার বা প্লেন দেখে তারা তীর ছুড়েছে। ২০০২ সালের ২ জেলে এবং ২০১৮ সালে আমেরিকান টুরিস্ট মারা যায় সেন্ট্রালিনদের হাতে। আর তাই জন্য ২০১৮ সালে ওই আইল্যান্ডকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।
No comments:
Post a Comment