'উত্তরবঙ্গের স্বার্থেই বাংলাদেশকে তিস্তার জল দেওয়া অসম্ভব', বিধানসভায় বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday 29 July 2024

'উত্তরবঙ্গের স্বার্থেই বাংলাদেশকে তিস্তার জল দেওয়া অসম্ভব', বিধানসভায় বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা

 


'উত্তরবঙ্গের স্বার্থেই বাংলাদেশকে তিস্তার জল দেওয়া অসম্ভব', বিধানসভায় বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা  





কলকাতা: বাংলাদেশকে তিস্তার জল দেওয়া হবে না। সোমবার বিধানসভায় স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিমত, প্রতিবেশী দেশকে তিস্তার জল দিলে বাংলায় খাবার জলের সংকট হবে। 


বাংলাদেশে তিস্তার জল দেওয়া নিয়ে এর আগেও বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আর এবার রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিস্তা ইস্যুতে সরব হয়েছেন মমতা। সোমবার তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, 'উত্তরবঙ্গের স্বার্থেই তিস্তার জল দেওয়া অসম্ভব।' 


বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এদিন মমতা অভিযোগ করেন, 'পশ্চিমবঙ্গকে না জানিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তি নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা করেছে। কিন্তু এরকমটা আগে কখনও হয়নি। আমি দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠকে জানিয়ে এসেছি। ওই প্রতিনিধি দলে একজনও বাংলার লোক নেই। এতে কাদের ভুগতে হয়? এমনই তিস্তায় জল কম। এরপর বাংলাদেশকে জল দিয়ে উত্তরবঙ্গের মানুষ খাবার জল পাবেন না।'  


এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আগে বাংলার প্রয়োজন মিটবে তারপরে প্রতিবেশী রাষ্ট্র।' কিন্তু এই ঘটনায় যে বাংলাদেশকে উপেক্ষা করা হচ্ছে- বিষয়টি মোটেও তা নয়। নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেই তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশকে যেটা দেওয়া সম্ভব, সেটা দিয়েছি। কিন্তু যা পারব না, তার জন্য কোনও আপোষ করব না। আমার নাকের ডগা দিয়ে আমারই জল নিয়ে যাবে? দক্ষিণবঙ্গ বা উত্তরবঙ্গ- কেউই এটা মানবে না। আমি বাংলার মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। তাঁদের সাথে স্বার্থপর আচরণ করতে পারব না।' 


মমতা এও স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার জল বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সময় রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর মতামত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন বাংলাকে কেন আলোচনা থেকে বাদ রাখা হচ্ছে?' 


তিনি এও অভিযোগ করেন, 'সিকিমের বাঁধের কারণেই আজ তিস্তায় জল নেই।' তার প্রশ্ন, 'সিকিমে তিস্তার ওপর কেন এত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প? আমরা এসবের প্রতিবাদ করছি বলে বাংলাকে ভাগ করার চেষ্টা? আমরা এটা কোনও ভাবেই মানব না।' 


মুর্শিদাবাদ, মালদা সহ বিভিন্ন এলাকায় গঙ্গার ভাঙন নিয়ে এদিন কেন্দ্রকে একহাত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ইস্যুতে ফারাক্কা ব্যারেজ প্রসঙ্গটিও উত্থাপন করেন তিনি। তাঁর অভিমত, 'ফারাক্কার ওপর পশ্চিমবঙ্গের এক বিশাল সংখ্যক মানুষ নির্ভরশীল। কিন্তু ফারাক্কায় কোনও রক্ষনাবেক্ষনের কাজ করে না। ফলে গঙ্গার ভাঙন প্রকট হয়ে উঠছে।' 


রাজ্যে প্রতিবছর বন্যা নিয়েও কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিমত, ড্রেজিং না করার কারণেই প্রতিবছর বন্যার প্রবণতা দেখা দেয়। এই ইস্যুতে 'দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন' (ডিভিসি) কর্তৃপক্ষকেও নিশানা করেছেন মমতা। 


ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের মত ভারত-ভুটান যৌথ নদী কমিশন করতে হবে বলেও দাবী জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সাথে জল বন্টন নিয়ে কেন্দ্রীয় সেচ মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলতে বিধানসভা থেকে কমিটি পাঠানোর প্রস্তাব দেন মমতা। 


শনিবার দিল্লীতে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরহিত্যে 'নীতি আয়োগ'এর ৯ তম গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে বাংলাদেশ দেশের সাথে জল বন্টনের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী।


সম্প্রতি, গত ২২ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরে দুই দেশের মধ্যে ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ঐদিন দিল্লীতে হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা দেন তিস্তা উন্নয়ন প্রকল্প সমীক্ষার ব্যাপারে ভারতের একটি কারিগরি দল খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ সফর করবে। একই সঙ্গে তিনি এও জানান, ২০২৬ সালের গঙ্গা নদীর জল বণ্টন চুক্তির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। তার পুনর্নবীকরণের জন্য উভয় দেশের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা আলোচনা শুরু করবেন। 


এরপর থেকেই সম্প্রতি এই ইস্যুতে বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে চলেছেন মমতা। মমতার অভিযোগ ছিল, বাংলাকে না জানিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশকে জল বিক্রি করতে চাইছে। হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা এও বলেছিলেন, 'কেন্দ্র যদি একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তার প্রতিবাদে গোটা দেশজুড়ে বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।' 


বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে মমতার ওই 'একতরফা পদক্ষেপ' এর অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' বলে দাবী করা হয় এবং পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় , 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতিনিধির সাথে আলোচনা করেই সরকার এই ইস্যুতে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।'

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad