প্রকৃতির ত্রিফলা আক্রমণ গুজরাটে; বৃষ্টি-বন্যার পর ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday 30 August 2024

প্রকৃতির ত্রিফলা আক্রমণ গুজরাটে; বৃষ্টি-বন্যার পর ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা


 প্রকৃতির ত্রিফলা আক্রমণ গুজরাটে; বৃষ্টি-বন্যার পর ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা 




প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ৩০ আগস্ট: গুজরাটে বৃষ্টি ও বন্যার ভয়াবহ প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। আহমেদাবাদ থেকে ভাদোদরা এবং কচ্ছ থেকে দ্বারকা পর্যন্ত রাস্তা তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ভাদোদরা, যেখানে অনেক রেসিডেন্সিয়াল কম্পাউন্ডে জল ভরে গিয়েছে। এদিকে প্রকৃতির আরেক আক্রমণ হতে চলেছে গুজরাটে। কচ্ছের ওপর ঘূর্ণিঝড়ের খাঁড়া ঝুলছে। মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল ঘূর্ণিঝড় থেকে মানুষকে বাঁচাতে নির্দেশ দিয়েছেন।


কচ্ছ জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় কচ্ছে আঘাত হানতে চলেছে। বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় গভীর নিম্নচাপটি দুর্বল হওয়ার পরিবর্তে শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আহমেদাবাদ সহ রাজ্য জুড়ে প্রবল হাওয়া বইবে। ভারী বর্ষণ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কচ্ছে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। মান্ডভিতে ১১ ইঞ্চির বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যার জেরে চারদিকে জল জমে গিয়েছে। মুন্দ্রায়ও প্রায় ৬ ইঞ্চি বৃষ্টি হয়েছে।


আগামী কয়েক ঘন্টার মধ্যে কচ্ছে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল বৃহস্পতিবার রাতে ভাদোদরা থেকে গান্ধীনগর স্টেট ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারে পৌঁছেছেন। তিনি কচ্ছের জেলা কালেক্টরের কাছ থেকে আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের জন্য করা প্রস্তুতির খোঁজখবর নেন। এই বিপর্যয় থেকে মানুষকে বাঁচাতে যেখানেই প্রয়োজন সেখানে অবিলম্বে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত বৈঠকে, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন যে, জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য পূর্ণ প্রচেষ্টা হোক।


আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গুজরাটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। আগামী দুই-তিন দিন জেলেদের সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে অধিদপ্তর। বৃষ্টির কারণে রাজ্যের ১৪০টি জলাধার, বাঁধ এবং ২৪টি নদীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে ট্রেন চলাচল ও যান চলাচলও ব্যাহত হয়েছে। ২০৬ টি বাঁধের মধ্যে ১২২টির জলস্তর তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জনগণকে জলাধার ও নদী থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।


শুক্রবার গুজরাটের বেশিরভাগ জায়গায় ভারী বৃষ্টি হতে চলেছে। মুষলধারে বৃষ্টির কারণে কয়েকটি জেলায় সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। আইএমডি জানিয়েছে যে, সৌরাষ্ট্র, কচ্ছ, জামনগর, পোরবন্দর এবং দ্বারকায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজকোট, জুনাগড়, মোরবি প্রভৃতি জেলাগুলিতে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এসব জেলায় ভারী বর্ষণ হতে চলেছে। 


বনাসকাঁথা, পাটন, মেহসানা, সবরকাঁথা, গান্ধীনগর, আরাবল্লী, খেদা, আহমেদাবাদ, আনন্দ, পঞ্চমহল, দাহোদ, মহিসাগর, ভাদোদরা, ছোট উদেপুর, নর্মদা, ভরুচ, সুরাট, ডাঙ্গস, তাপি, নবসারি, ভালসাদ এবং দাদরা নগর হাভেলিতেও প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। 


গত দুদিন থেকে গুজরাটের দ্বারকা জেলার কল্যাণপুর সহ অনেক এলাকায় একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। এনডিআরএফ, পুলিশ এবং পৌরসভার দলগুলি অবিরাম উদ্ধার অভিযানে নিযুক্ত রয়েছে। লোকজনকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কল্যাণপুর থেকে এয়ারলিফটে ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গত চার দিনে গুজরাটে বৃষ্টি-সম্পর্কিত ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং রাজ্যের অনেক অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যে প্রায় ১৭,৮০০ মানুষকে বন্যা কবলিত এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।


বন্যা ও বৃষ্টি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে ভাদোদরায়। ভাদোদরায় একটি কমপ্লেক্সে বন্যার জল ঢুকেছে। মাদিসা চৌকদি এলাকার এক কমপ্লেক্স জলে তলিয়ে গেছে, যেখানে গহনার দোকান, ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিসহ অনেক বড় বড় ব্যবসা অফিস রয়েছে। জল ঢোকার কারণে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মানুষ পাম্প দিয়ে জল তোলার চেষ্টা করেছেন। ভাদোদরায় অবস্থা খুবই খারাপ। বন্যার দুর্যোগের মুখে পড়তে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। জনগণের সহায়তার জন্য সেখানে সেনা জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। 


ভারী বৃষ্টির কারণে আহমেদাবাদের অনেক জায়গায় জল জমে গিয়েছে, যার কারণে মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কচ্ছে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সেখানে টানা বৃষ্টির কারণে কান্দলা বন্দরের কাজে সমস্যা হচ্ছে। জেলার অনেক এলাকা বন্যার কবলে পড়েছে। অবিরাম বৃষ্টিতে গুজরাটের খেদাতেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জামনগরের মানুষও বৃষ্টি ও বন্যা-দুইয়ের আঘাতের সম্মুখীন হচ্ছে। অনেক এলাকা সম্পূর্ণ জলে ডুবে গেছে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad