যন্ত্রণাময় জীবনই মদ্যপ বানিয়ে দেয় এই অভিনেত্রীকে, সকলের প্রিয় হয়েও ছিলেন ভালোবাসার কাঙাল
প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ০২ আগস্ট: ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এমনই এক জগৎ, যেখানে উজ্জ্বল নক্ষত্ররা এমন নিখুঁত জীবনযাপন করেন না, যা আমরা বাইরে থেকে দেখি। পঞ্চাশের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মীনা কুমারীর জীবনও এমনই ছিল। তাঁর জীবন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব বেদনাদায়ক ছিল। এর পরেও তিনি ফিল্ম লাইনে কাজ করেছেন এবং একটি ভিন্ন অবস্থানও অর্জন করেছেন।
মীনা কুমারীর একটি বিশাল ফ্যান ফলোয়িং ছিল কিন্তু বাস্তব জীবনে তিনি সত্যিকারের ভালোবাসার কাঙাল ছিলেন। বলা হয় যে, তাঁর জীবনে অনেক দুঃখ ছিল, যার কারণে তিনি মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। মীনা কুমারী সম্পর্কিত কিছু কথা জেনে নেওয়া যাক আজ এই প্রতিবেদনে।
১৯৩৩ সালের ১লা আগস্ট মুম্বাইয়ের দাদরে জন্মগ্রহণকারী মেহজাবীনের নাম চলচ্চিত্র জগতে আসার পর রাখা হয় মীনা কুমারী। তাঁর বাবা-মা ছিলেন আলী বক্স এবং ইকবাল বেগম। তাঁর বাবা ছেলে চেয়েছিলেন এবং তাই মীনা কুমারীর প্রতি হতাশ ছিলেন। মীনা কুমারী ছিলেন তাঁর পিতামাতার দ্বিতীয় কন্যা।
মীনা কুমারীর শৈশব কেটেছে বাবার ভালোবাসা ছাড়া। তিনি যখনই একটু বড় হন, তাঁর সৌন্দর্য দেখে তাঁকে একটি চলচ্চিত্রের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যাতে তাঁর একটি ছোট ভূমিকা ছিল। এর জন্য তিনি ২৫ টাকা পেয়েছিলেন। সেই ছবিটি ছিল 'লেদারফেস', যেটি ১৯৩৯ সালে মুক্তি পায়। মীনা কুমারীর বাবা তাঁকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি, তাই তিনি শৈশব থেকেই কাজ শুরু করেন এবং পরে এটিকে তাঁর পেশায় পরিণত করেন।
মীনা কুমারী যখন অল্পস্বল্প রোজগার শুরু করেন, তখন তিনি ঘরেই প্রাইভেট টিউশন নেন এবং নিজে থেকে পড়াশোনা করেন। মীনা ৪ বছর বয়সে তাঁর প্রথম ছবি করেছিলেন। ১৬ বছর বয়সে, তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র 'বাচ্চো কা খেল' (১৯৪৬) আসে, যার পরে তাঁর চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে। মীনা কুমারী তাঁর ৩৩ বছরের ফিল্ম ক্যারিয়ারে প্রায় ৯০টি চলচ্চিত্র করেছেন এবং তাঁর বেশিরভাগ ভূমিকা সিরিয়াস হত, তাই তাঁকে ট্র্যাজেডি কুইনও বলা হত।
চলচ্চিত্র নির্মাতা কামাল আমরোহী, মীনা কুমারীর সাথে অনেক চলচ্চিত্র করেছিলেন এবং সেই সময়ে তারা প্রেমে পড়েছিলেন। দুজনেই বিয়ে করতে চেয়েছিলেন কিন্তু কামাল আগেই বিয়ে করেছিলেন। তবে গোপনে বিয়ে সারেন তাঁরা।
সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কিছুদিন আগে কামালের প্রথম স্ত্রীর ছেলে তাজদার আমরোহী একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এতে তিনি প্রকাশ করেছিলেন, বিয়ের সময়, মীনা কুমারীর সামনে শর্ত রাখা হয়েছিল, যার মধ্যে ছিল সন্ধ্যা ৬ টার আগে বাড়ি ফেরা, খোলামেলা পোশাক না পরা। এছাড়া, কোনও সহ-অভিনেতার সাথে কোথাও না যাওয়া এবং কোনও নতুন ছবিতে সাইন না করার মতো শর্তও জড়িত ছিল।
মীনা কুমারী বিয়ে তো করেন কিন্তু পুরোপুরি ফেঁসে যান। তাঁর ওপর প্রচুর অত্যাচার হতে থাকে, যার কারণে তিনি মদ্যপানে ডুবে যেতে শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ডিভোর্স না নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন। শেষ দিনে তাঁর লিভার নষ্ট হয়ে যায় এবং দুইদিন কোমায় থাকার পর ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে তিনি মারা যান।
No comments:
Post a Comment