ডাইস্টোনিয়া জেনেটিক ডিসঅর্ডার কী? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday 3 August 2024

ডাইস্টোনিয়া জেনেটিক ডিসঅর্ডার কী?


ডাইস্টোনিয়া জেনেটিক ডিসঅর্ডার কী?

প্রেসকার্ড নিউজ,লাইফস্টাইল ডেস্ক,৩ আগস্ট: শিশুর শারীরিক বা মানসিক বিকাশ,যাই হোক না কেন,এটি ধীরে ধীরে ঘটে।তবে বিকাশ বন্ধ হয়ে গেলে তা বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।একই ঘটনা ঘটেছে ৭ বছর বয়সী শচীনের (নাম পরিবর্তিত)সাথে।৩ বছর ধরে তার উন্নয়ন মসৃণভাবে এগোচ্ছিল।কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই তার বিকাশ থমকে যায়।সে হাঁটতেও পারছিল না কিছু বলতেও পারছিল না।এমন পরিস্থিতিতে শচীনের বাবা-মা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন।শচীনের চিকিৎসার জন্য তারা অনেক হাসপাতালে গিয়েছিলেন।কিন্তু একটু উন্নতি হয়েই শচীনের অবস্থা আবার খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।অবশেষে শচীনের জেনেটিক ডাইস্টোনিয়া ডিসঅর্ডার ধরা পড়লে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব হয়।আসুন জেনে নেওয়া যাক জেনেটিক ডাইস্টোনিয়া ডিসঅর্ডার কী?এছাড়াও,এই ব্যাধির কারণে শচীন কী সমস্যায় পড়েছে বা অস্ত্রোপচারের পরে তার অবস্থা কী।

৩ বছর পর শচীনের বিকাশ বন্ধ হয়ে যায় -

শচীনের মা বলেন,'শচীনের যাত্রা চ্যালেঞ্জে ভরপুর।৩ বছর ধরে সে বেশ সুস্থ ছিল এবং স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছিল।কিন্তু ৩ বছর পর তার বৃদ্ধি ধীর হতে থাকে।একদিন হঠাৎ তার দুই পা শক্ত হয়ে গেল।এই কারণে সে হাঁটতে অসুবিধা অনুভব করতে থাকে।৬ মাসের মধ্যে শরীরের অন্যান্য পেশীতেও এই শক্তভাব দেখা দিতে শুরু করে।এমন পরিস্থিতিতে গুরুতর পঙ্গুত্বের মুখোমুখি হতে হয় শচীনকে।শক্ত হওয়ার সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় সে দাঁড়াতেও পারছিল না বসতেও পারছিল না।সে শুধু বিছানায় শুয়ে থাকত।এমনকি শচীনের মুখও শক্ত হয়ে গিয়েছিল।এই কারণে সে ঠিকমতো কথা বলতে পারছিল না, কিছু খেতেও পারছিল না'।

শচীনের শরীর হঠাৎ কাঁপতে শুরু করে -

শচীনের মা বলেন,'২০২০ সালে শচীনের বয়স ছিল আড়াই বছর।আড়াই বছর বয়সে সে পায়ের আঙুলে সোজা করে হাঁটতে শুরু করে।কিন্তু তা স্বাভাবিকভাবে চলছিল না।এরপর তাকে ফিজিওথেরাপি করানো হয়।এর ফলে কিছুটা উন্নতি দেখা যায়।কিন্তু যখন তার ৩ বছর বয়স হয়,তখন সে তার পুরো শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে।২০২১ সালের আগস্ট মাসে শচীনের প্রচণ্ড জ্বর হয়েছিল।সে দাঁড়াতে পারছিল না,তার সারা শরীর কাঁপতে থাকে।তার হজমের সমস্যা শুরু হয়।শচীনের এই অবস্থা দেখে আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেলাম।তারপর আমরা শচীনকে এসআরসিসিতে পাঠাই।শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাই।সেখানে শচীনের বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়,যাতে জানা যায় শচীনের জেনেটিক ডাইস্টোনিয়া ডিসঅর্ডার রয়েছে'। 

জেনেটিক ডাইস্টোনিয়া রোগ নির্ণয় করা হয়েছে -

এসআরসিসি চিলড্রেনস হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আনাতা উদওয়াদিয়া হেগড়ে বলেন,'শচীনের বাবা-মা যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন,তখন কিছু পরীক্ষা করা হয়।প্রাথমিক তদন্তে শচীনের মধ্যে ডাইস্টোনিয়া ধরা পড়ে'।ডাইস্টোনিয়া একটি জেনেটিক ব্যাধি।এরপর শচীনের এমআরআই,রক্ত ​​ও সেরিব্রাল স্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা করা হয়।এরপর জিনগত পরীক্ষা করা হয়।এই পরীক্ষায় KMT2B জিনে মিউটেশন নিশ্চিত করা হয়েছিল।

জেনেটিক ডাইস্টোনিয়া ব্যাধি কী?

জেনেটিক ডাইস্টোনিয়া একটি মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার,যা অস্বাভাবিক নড়াচড়ার কারণ হতে পারে।এটি শরীরের বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করতে পারে।জেনেটিক ডাইস্টোনিয়া মাঝারি থেকে গুরুতর উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।এই ব্যাধি জিনগত।অর্থাৎ এটি এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে যেতে পারে।

ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা -

ডাঃ আনাইতা উদওয়াদিয়া হেগড়ে বলেন,'শচীনের চিকিৎসার জন্য ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন সার্জারি ব্যবহার করা হয়েছিল।  এতে ইলেক্ট্রোডগুলি মাথার বেসাল গ্যাংলিয়ায় প্রতিস্থাপিত হয়।এই সার্জারি প্রাপ্তবয়স্কদের পারকিনসন রোগের চিকিৎসায় সহায়ক।যেখানে শিশুদের ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচার খুব কম ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।শচীনের অবস্থা দেখে তাকে ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন সার্জারি করার পরামর্শ দেওয়া হয়'।

অস্ত্রোপচারের পর অনেক উন্নতি হয়েছে -

শচীনের মা বলেন,'অস্ত্রোপচারের পর শচীনের অনেক উন্নতি হয়েছে।অস্ত্রোপচারের পর শচীন সহজেই বসতে পারছে।সে খাবার খেতেও সক্ষম।এর পাশাপাশি সে ধীরে ধীরে স্পষ্ট কথা বলতে শুরু করেছে।এখন শচীন আমাদের সাথে বসে কথা বলে।এখন সে স্কুলে যেতেও খুব আগ্রহী।এটি তাকে সবকিছু বুঝতে সাহায্য করেছে।শচীনের অবস্থা দেখে আমরা খুব ভয় পেয়েছিলাম।কিন্তু আজ শচীনের অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে'।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad