প্রধান বিচারপতির বাড়িতে গণেশ উৎসবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর যোগদান নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ! 'বাপ্পা সদ্বুদ্ধি দিন', পাল্টা বিজেপি
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ১২ সেপ্টেম্বর: সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের সরকারি বাসভবনে আয়োজিত গণেশ পুজোয় প্রধানমন্ত্রী মোদীর অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে চড়ছে রাজনৈতিক পারদ। বিরোধী নেতারা এই সাক্ষাতের সমালোচনা করেন। কেউ এও বলেন, 'ভিন্ন বার্তা যায়।' এই বিষয়ে পাল্টা জবাব দিয়েছে পদ্ম শিবির। বিজেপির কথায়, "গণেশ পূজায় যোগ দেওয়া কোনও অপরাধ নয় এবং অনেক অনুষ্ঠানে বিচারপতি ও রাজনীতিবিদরা একই মঞ্চে একসাথে বসেন।"
উল্লেখ্য, বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গণেশ পূজার জন্য দিল্লীতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রধান বিচারপতি ও তাঁর স্ত্রী কল্পনা দাস প্রধানমন্ত্রী মোদীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এক্স পোস্টে প্রধানমন্ত্রী মোদী গণেশ পুজোয় যোগদানের ছবি শেয়ার করে করার সময় একটি ছবি শেয়ার করে লেখেন, "আজ প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জি'র বাড়িতে গণেশ পূজায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। ভগবান গণেশ আমাদের সকলকে সুখ, সমৃদ্ধি এবং সুস্বাস্থ্য দান করুন।"
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে গণেশ পুজোয় প্রধানমন্ত্রী মোদীর অংশ নেওয়া নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন শিবসেনা নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় রাউত। তিনি বলেন, 'এই ধরনের সাক্ষাৎ সন্দেহ তৈরি করে।' তিনি পরামর্শ দেন যে, ভারতের প্রধান বিচারপতির উচিৎ শিবসেনা ইউবিটি এবং একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার মধ্যকার দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া।
সঞ্জয় রাউত সংবাদমাধ্যমে বলেন, "এটা গণপতি উৎসব। প্রধানমন্ত্রী এ পর্যন্ত কতজনের বাড়িতে গিয়েছেন, তার তথ্য তো আমার কাছে নেই। দিল্লীর অনেক জায়গায় গণেশ উৎসব পালিত হয়। দিল্লীতে মহারাষ্ট্র সদনেও হয়, কিন্তু প্রধান বিচারপতির কাছে প্রধানমন্ত্রী যান এবং তাঁরা দুজনেই একসঙ্গে বাপ্পার আরতি করেন। সংবিধানের রক্ষকরা যখন রাজনৈতিক নেতাদের সাথে এভাবে দেখা করেন... তখন মানুষের মনে সন্দেহ জাগে।"
তিনি আরও বলেন, "মহারাষ্ট্রের সরকার নিয়ে আমাদের যে মামলা চলছে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় সাহেবের সামনে তো আমাদের আশঙ্কা যে আমরা ন্যায় পাব। কারণ আমাদের কেসে প্রধানমন্ত্রী এক পক্ষ, কেন্দ্র সরকার এবং তারই প্রধান আসেন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে.. ঘরে বসেন তো শঙ্কা হয়। তাই আমার মনে হয় চন্দ্রচূড় সাহেবের আমাদের মামলা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া উচিৎ।"
আরজেডি নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ মনোজ ঝা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন যে, "প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা কেবল তাত্ত্বিক নয় বরং এটি দেখা উচিৎ। গণপতি পূজা ব্যক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু আপনি ক্যামেরা নিয়ে যাচ্ছেন। এতে যে বার্তা যায়, তা অসহজ করে। ভারতের প্রধান বিচারপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বড় ব্যক্তিত্ব। তাই তাঁরা যদি এই ছবিগুলো সর্বজনীন করতে সহমত হন, তাহলে আমরা কী করতে পারি।"
বিরোধীদের এ সকল সমালোচনার জবাব দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেন, ২০০৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আয়োজিত ইফতার পার্টিতে ভারতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কেজি বালাকৃষ্ণান যোগ দিয়েছিলেন।"
পুনাওয়ালা আরও বলেন, "গণেশ পূজায় অংশগ্রহণ করা কোনও অপরাধ নয়। অনেক ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ এবং রাজনীতিবিদরা মঞ্চ ভাগ করে নেন শুভ অনুষ্ঠানে, বিয়েতে, অনুষ্ঠানে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যদি প্রধান বিচারপতির বাড়ির পুজোয় উপস্থিত হন, তাহলে উদ্ধব সেনার সাংসদ প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সততা নিয়ে সন্দেহ করেন। কংগ্রেসের তন্ত্র সর্বোচ্চ আদালতের ওপর সেভাবেই হামলা করে যেমন অতীতে রাহুল গান্ধী করেছিলেন।" তিনি বলেন, "এটি আদালতের লজ্জাজনক অবমাননা এবং বিচার বিভাগের অপব্যবহার।"
বিজেপি নেতা কৃপাশঙ্কর সিং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর গণেশ দর্শনকে নিশানা করা বোকামি বলে অভিহিত করেন এবং গণপতি বাপ্পার কাছে এমন লোকদের সদ্বুদ্ধি দেওয়ার প্রার্থনা করেন।
No comments:
Post a Comment