অপহরণ কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল কাউন্সিলর মিলনের পিছনে একাধিক প্রভাবশালী
নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ২১ সেপ্টেম্বর: শত কোটির বেশি মূল্যের একাধিক জমি বাড়ি কেনার টাকা কোথায় পেলেন অপহরণ কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল কাউন্সিলর মিলন সরদার? এমন প্রশ্ন তুলে মিলনের সদস্যপদ খারিজের দাবীতে শনিবার দুপুরে পুরসভার সামনে ধরনায় বসেন বারাসত পুরএলাকার বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। অন্যদিকে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল মিলনের সাথে সাংসদ বিধায়ক ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা ছবি। বিরোধী ও তৃণমূলের একাংশের প্রশ্ন, মিলনের কুকীর্তি সামনে আশার পর কেন প্রার্থী করা হয়েছিল মিলনকে?
১৫ সালে তৃণমূল মিলন সরদারকে প্রার্থী করার আগে সরস্বতী পুজো ঘিরে ক্লাবের মারামারিতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে সরকারি বাড়ি দিতে টাকা নিয়েছিলেন। ক্ষোভ আর রোষের মুখে পড়ে বাড়ি ছাড়া হয়ে পরে কয়েকজন গরিবকে টাকা ফেরত দিয়েছিল বারাসত পুরসভার তত্বাবধানে। টালিখোলা এলাকার হাট ভয় ভীতি দেখিয়ে এক কাউন্সিলর ও কয়েকজন সমাজ বিরোধীদের সাথে লিজ নিয়ে চালাতেন মিলন। এতকিছু জানার পরও ২২ সালে কেন মিলনকে পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা হল? জেতার পর মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ও চেয়ারম্যানের সাথে ওঠা বসা করার সুযোগ কেন পেল মিলন সরদার? এমনকি বাগদা উপনির্বাচনে একাধিকবার গিয়েছিল কার প্রশ্রয়ে ? বিরোধী বামফ্রন্ট ছাড়াও প্রশ্নগুলো তুলছেন তৃণমূলের একাংশও।
তৃণমূল সূত্রের খবর, নিজেকে প্রভাবশালী প্রমাণ করতে দেখাতে ব্যবসায়ী অপহরণ কান্ডে গ্রেফতার হওয়া বারাসতের তৃণমূল কাউন্সিলর মিলন সরদার মন্ত্রী, সাংসদ ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকতেন। তুলতেন ছবি। সমাজমাধ্যমে সেসব পোষ্ট করতেন তিনি। তৃণমূল নেতৃত্ব মানছেনও সেসব ছবি এখন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হওয়ায় ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে সিআইডির হাতে বারাসত পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিলন সরদার গ্রেফতার হওয়ার পর প্রকাশ্যে এসেছে একাধিক কুকর্মের কাজ ও সম্পত্তির খতিয়ান। শনিবার দুপুরে বামফ্রন্টের নেতারা বারাসত পুরসভার সামনে মিলন সরদারের সদস্য পদ খারিজের দাবিতে জমায়েত করেন। অভিযোগ করেন সব জেনেও চুপচাপ ছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
বারাসত পুরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সিপিএমের রত্না ভট্টাচার্য বলেন, "বারাসত স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্লাটফর্ম রোড সংলগ্ন এলাকায় মদের দোকান বন্ধ করার সময় ব্যবসায়ীর হয়ে মিলন বলেছিল দলের তহবিলে মোটা অংকের টাকা দেবে ব্যবসায়ী। তবে আমি শুনিনি। আমরা চাই পুরসভার কাউন্সিলর পদ খারিজ করুক। মিলনের সাথে শাসক দলের অনেকেই অপহরণ কাণ্ডে জড়িত। নইলে মিলনের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়।"
বিরোধী বামেদের আরও অভিযোগ, জোরকরে টালিখোলা এলাকার হাট লিখিয়ে নেওয়া, সাট্টার র্যাকেট চালানো থেকে ত্রিপুরার ব্যবসায়ী অপহরণ করায় নাম জড়ানো বারাসত পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিলন সরদারের সাথে তৃণমূলের অনেকেই জড়িত ।তাদেরও গ্রেফতার করতে হবে।
মিলন সরদার গ্রেফতারের প্রভাব পড়েছে তৃণমূলের অন্দরে। এদিন দুপুরে দেখাগেছে বারাসত পুরসভার দশ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবব্রত পালের গরিবদের বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে। বারাসত ব্যারাকপুর রোডের শালবাগান এলাকায় ওই অনুষ্ঠানে হাজির হন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক ছাড়াও পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা। তৃণমূল সূত্রের খবর, মঞ্চে রথীন-পার্থ আসার আগে কাউন্সিলররা পাশাপাশি বসলেও একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছিলেননা। বাইরে থেকে টিপ্পনি কাটতেই দুই জনপ্রতিনিধি মঞ্চ থেকে নেমে যান। কয়েকজন তো মঞ্চে ওঠেন রথীন ও পার্থ আসার পর।
বিরোধী সিপিএম ও তৃণমূলের একাংশের প্রশ্ন, ২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচনের আগে সরস্বতী পুজোয় ক্লাবের মারামারিতে গ্রেফতার হন মিলন সরদার। জেতার পর সরকারি বাড়ি দিতে টাকা নেনে গরিবদের থেকে। বারাসতের টালিখোলা এলাকার এক হাট মালিককে ভয় ভীতি দেখিয়ে লিজ নেওয়া, একাধিক জমি ও বাড়ি কিনে পুরসভা থেকে মিউটেশন করানো দলের নেতৃত্ব জানতেন না এটা কি বাস্তব সম্মত?
বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, "এতদিন সিপিএমের রত্না ভট্টাচার্য বলেননি কেন? ১৩ সালে মিলনকে আমরা চিনতাম না। ১৫ সালে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত হওয়ায় মিলনকে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়। কাউন্সিলর হওয়ার পর তৃণমূল করছে মিলন। ফলে সিপিএম কেন বলছে জানিনা। " বারাসত পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, " মিলনকে কেন টিকিট দেওয়া হয়েছে তা দলের নেতৃত্ব বলতে পারবেন।চেয়ারম্যান পদে ছিলাম ঠিকই তবে টিকিট দেওয়ার দ্বায়িত্বে আমি ছিলাম না। "
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, "মিলন সরদারের নাম বাগদায় উপনির্বাচনে প্রচার ও দলের কাজে দ্বায়িত্বের তালিকায় ছিল না। কোনও পুরসভার কাউন্সিলরকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়নি। যারা নিয়ে গেছে তারাই বলতে পারবেন। বারাসতের নেতৃত্বের কাছে প্রশ্নটি করুন। "
খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, "আমরা জনপ্রতিনিধি আমাদের সাথে অনেকেই চলাফেরা করেন। মিলনের যা চলন বলন দেখেছি তাতে করে আমরা বুঝিনি। মিলনের পারফরমেন্স ভালো ছিল বলেই টিকিট পেয়েছে। সিআইডি তদন্ত করছে। আশাকরি বিষয়টি সামনে আসবে।" পার্থ ভৌমিক বলেন, "আইন আইনের পথে চলবে। "
No comments:
Post a Comment