'ন্যায় মিললেই চা পান', মমতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান জুনিয়র চিকিৎসকদের
কলকাতা: আরজি কর কাণ্ডে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন চলছে ৩৫ দিন ধরে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধর্না অবস্থানে রয়েছেন তাঁরা। বারবার ভেস্তে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠক। শনিবারও কালীঘাটে একই চিত্র ধরা পড়ে। এদিন বৈঠকের জন্য জুনিয়র চিকিৎসকদের দল মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে পৌঁছালেও বৈঠক হয়নি। লাইভ স্ট্রিমিং ইস্যুতে থমকে যায় বৈঠক। ঘন্টার পর ঘন্টা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে অপেক্ষা করেও ভেতরে যাননি জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
এদিন বৈঠকের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা। তাঁরা চিকিৎসকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বাইরে এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন, হাত জোড় করে অনুরোধ করেন বৃষ্টিতে না ভিজতে। অন্তত ভেতরে এসে তাঁরা যেন চা খেয়ে যান, এই প্রস্তাবও দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই নিয়ে মুখ খুলেছেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
আন্দোলনরত চিকিৎসকরা বলেন, 'সরকার আমাদের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে আন্তরিক নয়। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি বৈঠকের রেকর্ড করা ভিডিও এবং বিশদ বিবরণের স্বাক্ষরিত অনুলিপি শেয়ার করবেন। এ কারণে আমরা সরাসরি সম্প্রচার ছাড়াই বৈঠক করতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও তিনি বৈঠক করেননি।'
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে তাঁর সাথে দেখা করতে যাওয়া প্রতিনিধি দলের সদস্য ডক্টর আকিব এএনাইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, "আমাদের একটি অফিসিয়াল কথা বলার জন্য কালীঘাটে আসতে বলা হয়েছিল, আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। যখন আমরা সেখানে গিয়েছিলাম, তখন আমরা আমাদের দাবীর সাথে আপোসও করি। আমরা বলেছিলাম, শুধু মিটিং রেকর্ড করতে এবং মিটিং শেষ হলে আমাদের সেটা দিয়ে দিতে। কিন্তু সরকার পক্ষ এই নিয়ে সহমত হয়নি। এরপর মুখ্যমন্ত্রী বাইরে আসেন এবং চা পানের কথা বলেন। কিন্তু জুনিয়র চিকিৎসকেরা বলেন, আমরা তখনই চা পান করব, যখন ন্যায় মিলবে।"
তিনি বলেন, "আমরা পরে রেকর্ডিংয়ের দাবীটিও ছেড়ে দিয়েছিলাম এবং শুধুমাত্র সভার কার্যবিবরণী চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের বলা হয়, দেরি হয়ে গিয়েছে, এখন বৈঠক সম্ভব না। আমরা বৃষ্টির মধ্যে এতক্ষণ অপেক্ষা করেছি কিন্তু কোনও সমাধান ছাড়াই আমাদের ফিরে যেতে হয়ে।" এজন্য তাঁরা হতাশাও প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, "সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এটি দেখায় যে আমাদের দাবী সঠিক ছিল। সন্দীপ ঘোষ যা করেছেন তা একটি প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধ। এমন অনেক অধ্যক্ষ এবং আধিকারিক এই ধরণের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারেন। আমরা চাই যারা জড়িত সবাই পদত্যাগ করুন।" তিনি আরও বলেন, "ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা এখানে অভয়ার জন্য আছি এবং আমরা তাঁর জন্য ন্যায়বিচার দাবী করতে থাকব।"
উল্লেখ্য, কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ইনচার্জ অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। এফআইআরে দেরি, প্রমাণ লোপাট সহ একাধিক অভিযোগে শনিবার রাতে তাঁদের গ্ৰেফতার করা হয়। এই ঘটনায় উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা।
No comments:
Post a Comment