প্রদীপ ভট্টাচার্য, কলকাতা, ৫ অক্টোবর: অন্য আর দশটা দিনের মতোই সবই স্বাভাবিক ছিল এই গ্রামে। দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা হতেই গ্রামের সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু সকালে গ্রামের অর্ধেকের বেশি মানুষের ঘুম আর ভাঙ্গেনি। শুধু মানুষ নয় পশুপাখিও মরে পড়ে থাকে যেখানে সেখানে। এমনই ঘটনা ঘটেছিল আফ্রিকার লোয়ার নিয়োস গ্রামে।
১৯৮৬ সালের ২১ আগস্ট প্রায় ১৮০০ মানুষ এবং ৩০০০ গবাদি পশুর মৃতদেহ উদ্ধার হয় ওই গ্রাম থেকে। কেন এক রাতে গ্রামের এত মানুষের একসঙ্গে মৃত্যু হয়েছিল তা খুঁজে পেতে হিমশিম খেতে হয় প্রশাসনকে।
পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে নানান রহস্য। যার অনেকটাই এখনো ভেদ করতে পারেনি মানুষ। তেমনি দীর্ঘ গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, লোয়ার নিয়োস গ্রামের পাশে থাকা একটি হ্রদের কারণেই মৃত্যু হয়েছিল ওই গ্রামের ১৮০০ মানুষ ও ৩০০০ গবাদি পশুর।
এই গ্রামের মানুষ জানতেন না যে লেক নিয়োস হ্রদের তলায় রয়েছে একটি ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। মনে করা হয় ১৫০০ লাখ বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আফ্রিকার বিচ্ছেদের সময় একটি ফাটল তৈরি হতে শুরু করেছিল। সেই কারণে এই আগ্নেয়গিরিমালার উৎপত্তি।
আগ্নেয়গিরিমালার নিচে ৮০ কিলোমিটার গভীরে এখনো একটি বড় লাভার প্রকোষ্ঠ রয়েছে। লাভার প্রকোষ্ঠ থেকে মাঝেমধ্যেই প্রচুর গ্যাস নির্গত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মুখের ওপর যদি প্রাকৃতিক নিয়মে কোনও হ্রদ বা জলাভূমি সৃষ্টি হয় তাহলে সেই গ্যাস ওই হ্রদ বা জলাভূমি বরাবর প্রবাহিত হয়। আগ্নেয়গিরির মুখের উপর তৈরি হওয়া এই হ্রদগুলোকে 'মার হ্রদ' বলা হয়।
লাভা প্রকোষ্ঠ থেকে উৎপন্ন সালফার এবং কার্বন ডাই অক্সাইড এর মতো গ্যাস ওই হ্রদ গুলোর তলায় ঘনীভূত অবস্থায় থাকে। গ্যাসগুলোকে তলদেশেই আটকে রাখতে ওই ধরনের হ্রদগুলোর উপরিভাগে প্রাকৃতিক নিয়মেই একটি উষ্ণ জলের আচ্ছাদন তৈরি হয়।
বিজ্ঞানীদের দাবি, যে রাতে লোয়ার গ্রামে ওই বিপর্যয় ঘটে, সে রাতে কোনওভাবে নিয়োস হ্রদের ওপরের সেই নিরাপত্তা বলয় ভেঙে যায়। আর তাই উষ্ণ জলের আচ্ছাদন ভেদ করে বেরিয়ে আসে বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘন মেঘ। এই বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয় বহু গ্রামবাসী ও গবাদি পশুর।
No comments:
Post a Comment