নিজস্ব সংবাদদাতা, বীরভূম, ২১ অক্টোবর: পুজোর আগেই তিহাড় থেকে বাড়ি ফিরেছেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল। দিন কয়েক আগেই কর্মীদের সঙ্গে সভাও করেছেন, একজোট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন মুরারাইয়ের সভা থেকে। কিন্তু এবারে যেন অন্য সুর শোনা গেল অনুব্রতর গলায়। তৃণমূলের জেলা সভাপতির পদ ছাড়ার ইঙ্গিত দিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তবে, এখনই দায়িত্ব ছাড়ছেন না, ২০২৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চতুর্থবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েই বীরভূমের জেলা সভাপতির দায়িত্ব ছাড়বেন। সোমবার বীরভূমের সিউড়ির ২ ব্লকের পুরন্দরপুরের মাঠে বান্ধব সমিতির সভা থেকে একথা নিজেই জানালেন কেষ্ট।
এদিন সিউড়ির পুরন্দরপুর এলাকার বিজয়া সম্মেলনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন অনুব্রত মণ্ডল। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, "নুরুল খুব ভালো ছেলে। আমরা একসাথে রাজনীতি করেছি এবং একসাথে কাজ করেছি। আমি নুরুলকে বলব এখনই পদ না ছাড়ার কথা। আরেকবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করে দেওয়ার পর ছাড়তে হলে, একসাথে দুই দাদা-ভাই মিলে ছাড়ব।" উল্লেখ্য, ওই এলাকার ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম নিজের পদ ছাড়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতেই এই মন্তব্য অনুব্রতর।
নুরুল ইসলাম সিউড়ি ২ ব্লকের সভাপতি। অনুব্রত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত তিনি। অনেকেই তাঁকে ছোট কেষ্ট বলেও ডাকেন। চলতি বছরের জুলাইয়ে পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শতাব্দী রায়কে চিঠিও লিখেছিলেন। কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন, পরবর্তী প্রজন্মের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। যদি পদ্ম শিবিরের দাবী ছিল, নুরুলের নামে সিবিআই ভুয়ো অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছিল, সেই ভয়েই পদ ছাড়তে চাইছেন তিনি।
এদিকে, তিহাড় থেকে ফিরে অনুব্রত মণ্ডলের ঝাঁঝও যেন অনেকটাই কমে গিয়েছে। বিভিন্ন কর্মীসভায় অংশ নিলেও আগের মতন ঝাঁঝালো বক্তব্য আর শোনা যাচ্ছে না অনুব্রত মণ্ডলের মুখে। পাশাপাশি অনুব্রত মণ্ডলের পাশে একসময় দাঁড়িয়ে থাকা বহু নেতা-কর্মী এখন আর দেখা যাচ্ছে না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা ভেবেই কী অনুব্রত মণ্ডল পদ ছাড়ার কথা বলছেন! এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
আবার অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবী, গরু পাচার মামলায় জামিনে মুক্ত অনুব্রত। এখনও মামলা চলছে, তাই কোনও কিছুতেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তিনি। পাশাপাশি শারীরিকভাবেও অনেকটাই অসুস্থ। সেই শরীর নিয়েই কর্মীদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করছেন। সংগঠনের রাস শক্ত হাতে বাঁধতে চাইছেন। সেজন্যই হয়তো এভাবে বীরভূমের মাটিতে অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নতুন প্রজন্মের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দিতে চাইছেন তৃণমূলের এই দাপুটে নেতা।
No comments:
Post a Comment