আইভিএফ-এ যমজ সন্তানের গর্ভাবস্থায় কী কী সমস্যা হতে পারে? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, 7 October 2024

আইভিএফ-এ যমজ সন্তানের গর্ভাবস্থায় কী কী সমস্যা হতে পারে?


প্রেসকার্ড নিউজ,লাইফস্টাইল ডেস্ক,৭ অক্টোবর: কাজের চাপ হোক বা খারাপ খাদ্যাভ্যাস,এই সবই আমাদের স্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।এই কারণেই দেশে প্রজনন সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে।তবে অন্যান্য অনেক কারণও নারী এবং পুরুষদের প্রজনন স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।এই সমস্যাগুলির মধ্যেও সন্তান নিতে ইচ্ছুক দম্পতিদের জন্য IVF প্রযুক্তি আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়।আইভিএফ প্রক্রিয়া চলাকালীন পুরুষ এবং মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেক সমস্যা সমাধান করা হয়।এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের ঘরে ঘরে হাসির প্রতিধ্বনি করার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।এই চিকিৎসার আগে নারী ও পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়।এরপরে পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে,ডাক্তার রোগীর জন্য সঠিক পদ্ধতিটি বেছে নেন।আইভিএফ বেছে নেওয়া বেশিরভাগ মহিলাই যমজ সন্তানের জন্ম দেন।আসলে IVF-এর সাফল্যের হার বাড়ানোর জন্য ডাক্তাররা মহিলার জরায়ুতে বেশ কয়েকটি ভ্রূণ স্থানান্তর করেন।এতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।সেই সঙ্গে গর্ভাবস্থায় যমজ সন্তান হওয়ার ফলেও অনেক সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।আজ আমরা IVF গর্ভাবস্থায় যমজ সন্তানদের সমস্যার বিষয়ে বিস্তারিত জানব।

আইভিএফ (আইভিএফ টুইন প্রেগন্যান্সি কমপ্লিকেশন)-এ যমজ সন্তানের গর্ভাবস্থায় কী কী সমস্যা হতে পারে সেই প্রশ্ন নিয়ে মানুষের মনে অনেক সন্দেহ থাকতে পারে।এই বিষয়ে যশোদা ফার্টিলিটি অ্যান্ড আইভিএফ সেন্টার কর্কড়ডুমার বন্ধ্যাত্ব এবং আইভিএফ পরামর্শদাতা ডাঃ স্নেহা মিশ্র এই জটিল বিষয়টিকে আরও সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন। 

আইভিএফ-এ মহিলার ডিম্বাণু পুরুষের শুক্রাণুর সাথে নিষিক্ত হয় এবং ভ্রূণগুলি জরায়ুতে স্থাপন করা হয়।এতে যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়।গর্ভাবস্থায় যমজ সন্তান মা ও শিশু উভয়ের জন্যই অনেক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। 

লো বার্থ ওয়েট (জন্মের সময় কম ওজন) -

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে,যমজ সন্তানের সাথে গর্ভাবস্থায় জন্ম নেওয়া শিশুদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে।এটি শিশুদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।যেমন- শ্বাসকষ্ট, সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি এবং বৃদ্ধি হ্রাস ইত্যাদি।

অকাল প্রসব -

যমজ সন্তানের সাথে IVF গর্ভাবস্থায় অকাল প্রসব (প্রিটার্ম লেবার) সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা বলে মনে করা হয়।একটি স্বাভাবিক গর্ভাবস্থা ৩৭ থেকে ৪০ সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়,যখন যমজ গর্ভধারণের ক্ষেত্রে প্রায়ই ৩৭ সপ্তাহের আগে প্রসবের ঝুঁকি থাকে।এতে শিশুদের ওজন কমে যায় এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে।

প্রিক্ল্যাম্পসিয়া -

প্রিক্ল্যাম্পসিয়া একটি গুরুতর সমস্যা যেখানে একজন গর্ভবতী মহিলার রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যায়।এর ফলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুলে যাওয়া,প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিন এবং অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।এই অবস্থা গর্ভাবস্থায় অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। 

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস -

যমজ সন্তানের গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে সুগারের মাত্রা বাড়তে থাকে,যাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলে।যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়,তাহলে এটি শিশুদের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে এবং প্রসবের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

রক্তশূন্যতা -

গর্ভাবস্থায় শরীরের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তের প্রয়োজন হয়।যমজ সন্তানের সাথে গর্ভাবস্থায় এই প্রয়োজন আরও বেড়ে যায়,যা মায়ের রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।এই অবস্থা মা এবং শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

IVF-তে যমজ সন্তানের গর্ভাবস্থায় উদ্ভূত সমস্যাগুলি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?  

IVF চিকিৎসার সময়,একজন মহিলাকে যমজ সন্তানের গর্ভধারণ সংক্রান্ত সমস্যা এড়াতে বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

প্রসবপূর্ব যত্নের রুটিন - 

যমজ সন্তানের গর্ভাবস্থায় সমস্যা এড়াতে,একজন মহিলার নিয়মিত প্রসবপূর্ব চেকআপ করা উচিৎ।চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সময়ে সময়ে আল্ট্রাসাউন্ড,রক্ত ​​পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা করাতে হবে।এর মাধ্যমে যেকোনও ধরনের জটিলতা সময়মতো শনাক্ত করা যায় এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন -

গর্ভাবস্থায় সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  বিশেষ করে যমজ সন্তানের গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে বেশি পুষ্টির প্রয়োজন হয়।এমন পরিস্থিতিতে আয়রন,ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ।চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টও নেওয়া যেতে পারে। 

পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম -

যমজ সন্তানের গর্ভাবস্থায় মহিলার শরীরের আরও বিশ্রাম এবং ঘুমের প্রয়োজন হয়।একজন গর্ভবতী মহিলার দিনে কমপক্ষে ৮-১০ ঘন্টা ঘুমানো উচিৎ।এছাড়া শরীর যখনই ক্লান্ত বোধ করে তখন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া জরুরি।

নিয়মিত ওজন পরীক্ষা - 

যমজ সন্তানের গর্ভাবস্থায় ওজন নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  এমন পরিস্থিতিতে একজন মহিলার নিয়মিত তার ওজন পরীক্ষা করা উচিৎ এবং নিশ্চিত করা উচিৎ যে ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম নয়।অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

মানসিক চাপ এড়ান -

যমজ সন্তানের গর্ভাবস্থায় মানসিক ও শারীরিক চাপ সমস্যার প্রধান কারণ হয়ে উঠতে পারে।একজন গর্ভবতী মহিলার উচিৎ তার মন ও শরীরকে শান্ত রাখতে ধ্যান,শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা।মানসিক চাপ এড়াতে পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়াও উপকারী হতে পারে।

ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম -

গর্ভাবস্থায় হালকা ব্যায়াম ও যোগব্যায়াম করলে শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।এটি প্রসবের সময় জটিলতার ঝুঁকি কমাতে পারে।হালকা ব্যায়াম,যেমন- হাঁটা,স্ট্রেচিং এবং প্রসবপূর্ব যোগব্যায়াম গর্ভাবস্থায় খুবই সহায়ক।

IVF যমজ গর্ভাবস্থার জটিলতা -

IVF এর মাধ্যমে যমজ সন্তানের গর্ভধারণ একটি আশীর্বাদ  হতে পারে,তবে এর সাথে কিছু জটিলতাও রয়েছে।সময়মতো রোগ নির্ণয়,নিয়মিত পরিচর্যা এবং সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে এই জটিলতাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়।আইভিএফ-এর মাধ্যমে সফলভাবে যমজ গর্ভধারণ সম্পন্ন করতে কোনও ধরনের সমস্যাকে উপেক্ষা না করে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ।

বি.দ্র: এই বিষয়বস্তু,পরামর্শ সহ, শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য প্রদান করে।এটা কোনওভাবেই যোগ্য চিকিৎসা মতামতের বিকল্প নয়। আরও তথ্যের জন্য সর্বদা একজন বিশেষজ্ঞ বা আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।  প্রেসকার্ড নিউজ এর দায় স্বীকার করে না।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad