কলকাতা: কেন্দ্রীয় সরকারের শাসক দল বিজেপির সাথে বাংলার শাসক দল তৃণমূলের গোপন বোঝাপড়া ফাঁস করলেন বিজেপি বিধায়ক তথা টলিউড অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের শাসক দল বিজেপি ও পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে তুমুল বিরোধিতা ভারতের গন্ডি ছাড়িয়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহরা একে অপরের বিরুদ্ধে চড়া গলায় রাজনৈতিক আক্রমণ করেন। বিজেপি ও তৃণমূলের মত এমন কঠোর প্রতিপক্ষ ভারতের বর্তমান রাজনীতিতে আর কেউ দেখাতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররা গত দু'টি লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে দুই দলকে বেছে নেওয়ায় বাম কংগ্রেস শূণ্য হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কার্যত বোমা ফাটালেন বিজেপি বিধায়ক তথা টলিউড অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়।
শনিবার তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার দাঁড় করিয়ে করিয়ে জিতিয়েছে তৃণমূলকে, আমরা হতাশ! লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকার দাঁড় করিয়ে করিয়ে টিএমসিকে জিতিয়েছে। আপনারা তো দেখেছেন, সেন্ট্রাল ফোর্স দাঁড়িয়ে থাকত আর ওরা আমাদের বুথ দখল করে ভোট করছিল! আমরা হাইকোর্টেও গিয়েছিলাম। কিন্তু, নির্বাচন কমিশন সিসিটিভি ক্যামেরা ফরেন্সিকের জন্য পাঠাতে রাজি হয়নি।"
শনিবার বিজেপি প্রার্থী শুভজিৎ রায়ের সমর্থনে ভোট প্রচারে এসে মেদিনীপুর শহরে 'হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন' খড়গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় ওরফে হিরণ। এতদিন বাম-কংগ্রেস সহ রাজ্যের রাজনীতি-সচেতন একাংশ মানুষ যে 'দিদি-মোদী সেটিং' বা 'কেন্দ্র-রাজ্য আঁতাত' এর অভিযোগ করে আসছিলেন তাতেই কার্যত সিলমোহর দিলেন হিরণ। বললেন, "মানুষ হতাশ, আমরা বিজেপি কর্মীরাও হতাশ।"
যদিও, হিরণের দাবী, "মানুষ বিজেপি-র পাশে আছে। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার (নির্বাচন কমিশন?) যদি ভোটটা ঠিকঠাক করিয়ে দেয়। তবেই এই ভোটে জিততে পারব। নাহলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ওপর ভরসা করলে, এ ভোট জেতা যাবে না!"
উল্লেখ্য যে, এর আগে মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন লোকসভা নির্বাচনের সময়। তবে তাঁরা কখনই কেন্দ্রীয় সরকার তথা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেননি বরং তাঁদের মন্তব্য ছিল, "কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পরিচালনা করে রাজ্য পুলিশ!"
এবারের উপনির্বাচনেও যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর খুব একটা ভরসা করতে পারছেন না তাঁরা, তা রাজ্যের বিরোধী দলনেতার কথাতেও স্পষ্ট হয়েছে। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহরে এসে শুভেন্দু অধিকারী এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, "কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাজ্য পুলিশ যেভাবে ব্যবহার করে, ওরা তাই করতে বাধ্য হয়। তাই খুব বেশি ভরসা করার জায়গা নেই!" আর সেজন্যই এবার কোনও 'অন্যায়' হলে জাতীয় সড়ক অবরোধের হুমকি দিয়ে রেখেছেন শুভেন্দু!
তবে, বিজেপি প্রার্থীর ভোট প্রচারে এসে এদিন হিরণ যেভাবে কেন্দ্র-রাজ্য 'গোপন আঁতাত' অভিযোগে সরব হলেন তাতে কার্যত মাথায় হাত বিজেপি নেতাদের। অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলছেন, তবে কী ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে হিরণ ফের তৃণমূলে যাওয়ার পথটা পরিষ্কার করতে শুরু করলেন? নাকি সত্যিই সত্যিই প্রচণ্ড ক্ষোভ, হতাশা থেকে এমন 'বেফাঁস' মন্তব্য করে বসলেন? এ নিয়ে কোনও পক্ষের কেউই কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
No comments:
Post a Comment