জানেন কি কেন মিষ্টি খেলে আনন্দ বোধ হয়? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, 22 November 2024

জানেন কি কেন মিষ্টি খেলে আনন্দ বোধ হয়?


প্রেসকার্ড নিউজ,লাইফস্টাইল ডেস্ক,২২ নভেম্বর: সারা বিশ্বে আনন্দের অনুষ্ঠানে মিষ্টি খাওয়ার একটি ঐতিহ্য রয়েছে।এই কারণেই যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানে মিষ্টি দেওয়ার প্রথা রয়েছে আমাদের।এর সাথে এটাও হয় যে মুড একটু খারাপ বা বিষণ্ণ থাকলেও মিষ্টি খেলে ভালো লাগে।মিষ্টি খাওয়া আমাদের আনন্দ দেয়।কিন্তু কেন এমন হয়?এর পেছনের কারণ কী?

মিষ্টি খেয়ে খুশি হওয়ার কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে যুক্ত।আমাদের মস্তিষ্কের হরমোনের প্রতিক্রিয়ার সাথে এর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।আমরা যখনই মিষ্টি কিছু খাই,তখন আমাদের শরীরে কিছু প্রধান নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয়,যা আমাদের মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়।এই কারণেই মিষ্টি খাবারগুলি আমাদের মুড উন্নত করে এবং আমাদের এনার্জিও দেয়।

শুভ কাজ উপলক্ষে মিষ্টি খাওয়ার ঐতিহ্য -

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যদি কোনও ঐতিহ্য থেকে থাকে যা কোনওভাবে একই রকম হয়,তাহলে এর পেছনে কিছু বিশেষ  কারণ রয়েছে।সারা বিশ্বে খুশির অনুষ্ঠানে মিষ্টি খাওয়ার প্রথার পিছনেও এমনই একটি কারণ আছে।এর একটি বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি রয়েছে।সাংস্কৃতিকভাবে,মিষ্টিকে ইতিবাচকতা এবং শুভ প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।আনন্দের মুহুর্তে এটি বন্টন করা ভালোবাসা এবং সুখের প্রতীক।এই কারণেই আমরা শুভ কাজ উপলক্ষে লাড্ডু,হালুয়া এবং অন্যান্য মিষ্টি তৈরি করি।যেখানে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে কেক এবং চকোলেট জনপ্রিয়।এই সমস্ত মিষ্টি আইটেম শুধুমাত্র সুস্বাদুই নয়,মানসিকভাবেও এর স্বস্তিদায়ক প্রভাব রয়েছে।তাই বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক উভয় কারণেই আমরা মিষ্টিকে আমাদের আনন্দের অংশ বানিয়ে ফেলেছি।

মিষ্টি এবং মুডের মধ্যে সম্পর্ক কী?

মিষ্টি এবং মুডের মধ্যে সম্পর্কের একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও রয়েছে।মিষ্টি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে কিছু জৈবিক প্রতিক্রিয়া ঘটে,যা আমাদের আনন্দিত করে।যখন আমরা মিষ্টি খাই,তখন এটি মস্তিষ্কের "পুরস্কার ব্যবস্থা" বা Reward System-কে সক্রিয় করে যা ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের মতো হরমোন নিঃসরণ করে।এই হরমোনগুলো মানসিক চাপ কমিয়ে সুখ বাড়ায়।এর পাশাপাশি মিষ্টি জিনিস শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়।যখন চিনি রক্তে দ্রবীভূত হয় তখন তা ইনসুলিনের মাধ্যমে কোষে পৌঁছায়।যার ফলে শরীরে শক্তির মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।এই প্রভাব আমাদের সতেজ এবং সন্তুষ্ট বোধ করায়।

মিষ্টি খাওয়ার পর আমাদের শরীরে এই প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় -

আমরা যখন মিষ্টি খাই তখন আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা বেড়ে যায়।ডোপামিন "আনন্দের হরমোন" নামেও পরিচিত।এটি আমাদের মনস্তাত্ত্বিক পুরষ্কার সিস্টেমকে সক্রিয় করে,যা আমাদের খুশি এবং সন্তুষ্ট বোধ করায়।এই কারণেই মিষ্টি খাওয়া আমাদের ভালো অনুভব করায়।কারণ এটি আমাদের মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাঠায়।এছাড়াও, সেরোটোনিন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার যা আমাদের মুড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।মিষ্টির মতো কার্বোহাইড্রেট সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে,যা আমাদের শান্ত ও সন্তুষ্ট বোধ করায়।সেরোটোনিনের উচ্চ মাত্রা বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ কমাতে সহায়ক হতে পারে।এন্ডোরফিন, যা "ফিল-গুড" হরমোন নামে পরিচিত,ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং আপনাকে খুশি হতে সাহায্য করে।আমরা যখন চকোলেটের মতো খাবার খাই,তখন আমাদের শরীর এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে,যা আমাদের স্বস্তি ও আনন্দিত করে।অক্সিটোসিন,"লাভ হরমোন" নামেও পরিচিত।এটি আমাদের ভালোবাসা এবং আবেগগতভাবে সংযুক্ত বোধ করায়।যদিও মিষ্টি খাওয়া সরাসরি অক্সিটোসিনের নিঃসরণকে ট্রিগার করে না,এই হরমোনটি আমাদের শরীরে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে যখন আমরা খুশি থাকি এবং ভালো বোধ করি।

ডোপামিন এবং মিষ্টির সম্পর্ক - 

ডোপামিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা আমাদের মস্তিষ্কের "পুরস্কার সিস্টেম" এর অংশ।আমরা যখন মিষ্টি বা আমাদের প্রিয় খাবার খাই,তখন ডোপামিন নিঃসৃত হয় যা সুখ ও তৃপ্তির অনুভূতি সৃষ্টি করে।এটি আমাদের শরীরের একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া যা আমাদেরকে এমন খাবারের প্রতি আকৃষ্ট করে,যা আমাদের এনার্জি দেয়।অনেক গবেষণায় এই তথ্য প্রমাণিত হয়েছে।

সেরোটোনিন এবং মুড -

সেরোটোনিন মুড নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং শান্ত ও তৃপ্তি বোধ করতে সহায়তা করে।মিষ্টির মতো কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার শরীরে ট্রিপটোফ্যানের মাত্রা বাড়ায়,যা সেরোটোনিন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়।এটি হতাশা এবং উদ্বেগ কমাতেও সহায়ক হতে পারে।

এন্ডোরফিন এবং চকোলেট -

এন্ডোরফিন "ফিল-গুড" হরমোন হিসাবে পরিচিত,যা ব্যথা কমাতে এবং সুখ বাড়াতে সাহায্য করে।চকোলেটের মতো খাবার এন্ডোরফিন নিঃসরণ করতে পারে।ডার্ক চকোলেটের পলিফেনলের মতো যৌগগুলি মানসিক চাপ কমাতে এবং মুড উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে।

অক্সিটোসিন -

অক্সিটোসিনকে "লাভ হরমোন" বলা হয়।যদিও মিষ্টি খাওয়া সরাসরি এই হরমোন নিঃসরণ করে না,তবে সুখের ইতিবাচক অবস্থা,সংযুক্তি এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এটি প্রচার করতে পারে।

সামগ্রিকভাবে,মিষ্টি খাওয়ার ফলে শরীর এবং মস্তিষ্কে অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যা আমাদের মুড এবং মানসিক অবস্থার উন্নতি করে।তবে এর সুষম ব্যবহার প্রয়োজন।কারণ অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।আপনার যদি কোনও ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে,তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad