সুবিধাবাদীকে প্রার্থী করা নিয়ে কোন্দলে জর্জরিত সংগঠন, তবুও হাড়োয়ায় জিতবে তৃণমূল প্রার্থী - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, 5 November 2024

সুবিধাবাদীকে প্রার্থী করা নিয়ে কোন্দলে জর্জরিত সংগঠন, তবুও হাড়োয়ায় জিতবে তৃণমূল প্রার্থী


উত্তর ২৪ পরগনা: সুবিধাবাদীকে প্রার্থী করা ও আভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত তৃণমূলের হাড়োয়ার সংগঠন। এত কিছুর পর উপ নির্বাচনে জিতবে তৃণমূল প্রার্থীই। 


গত পাঁচ দিনে সন্দেশখালি ও মিনাখাঁর বিধায়কের ওপর হামলা। বসিরহাট উত্তরের বিধায়কের খোঁজে পোস্টার। মিনাখাঁয় পঞ্চায়েত প্রধানের ওপর হামলা এবং হাড়োয়ায় বিজেপি ঘুরে আসা তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও জমি দখলের ঘটনায় দলের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, সব ক্ষেত্রেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে এসেছে।   


তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের দাবী, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রাজনৈতিক কারণে নয়, জমি দখলের কারণে। সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের সময় এখানে শুধুমাত্র তার শাসন চলতে থাকে। তাঁকে গ্রেফতারের পর থেকেই অশান্তি চলছে। শাহজাহানের পক্ষে এতদিন যারা মাথা তুলতে পারেনি, তারা এখন নেমে এসেছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের উপদলীয় কোন্দল হঠাৎ করে দেখা দেয়নি। শ্রমিকদের একাংশ জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তা চলছে। তাঁরা মনে করেন, এটি এখন আরও প্রকাশ্যে পরিণত হচ্ছে। 


বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে হাড়োয়া বিধানসভা উপনির্বাচন। তার আগেই দলের এই অবস্থা তৃণমূল নেতৃত্বের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বসিরহাটের প্রয়াত সাংসদ নুরুল ইসলামের ছেলে শেখ রবিউল ইসলাম উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর পক্ষে প্রচার চালালেও দেগঙ্গা ব্লকের চাপাতলা পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচার নিয়ে এখানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আরও গোষ্ঠী রয়েছে। হাড়োয়া সহ বসিরহাট মহকুমা জুড়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব সম্প্রতি বেশ কয়েকবার সামনে এসেছে, যার ফলে উপনির্বাচনে এর প্রভাব সম্পর্কে বিরোধী দলগুলির মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে৷


নুরুল হাড়োয়ার দুই বারের বিধায়ক ছিলেন। তিনি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৮০ হাজার ৯৭৮ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন আইএসএফ প্রার্থী। তিনি ২১ দশমিক ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। বিজেপি পেয়েছে ১৬.৯৩ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে এখানে বিরোধীদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল। রবিউল এর আগে হাড়োয়া থেকে জয়ী হয়ে জেলা পরিষদের সদস্য হন। রেশনের ডিলারশিপ পেতে জেলাপরিষদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। বিধায়ক হতে রবিউল ফের ডিলারশিপ ত্যাগ করে প্রার্থী হন উপনির্বাচনে। কয়েক মাসের মধ্যে রবিউলের এই ডিগবাজি জেলা তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা কর্মী ভালোভাবে নেয়নি। 


শাসক দলের অন্দরে ধারণা এখানে রবিউলই জিতবে। কারণ, বিরোধীরা নেই। বিরোধীরা নিজেদের মধ্যে দলাদলির সুযোগ নেবে না, এমন গুঞ্জন শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্র সংখ্যালঘু প্রধান। তাদের মধ্যে তৃণমূলের প্রভাব এখনও প্রশ্নাতীত। যদিও রাজ্য জুড়ে সুশীল সমাজ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক তরুণী ডাক্তার ছাত্রীকে খুন-ধর্ষণ নিয়ে আলোচনায় এসেছে, হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রে তেমন কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকটি কর্মসূচিতে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি কম ছিল। দুর্গা পূজার সময়, এখানকার অনেক পুজো উদ্যোক্তা রাজ্য সরকারের অনুদানও নিয়েছিলেন৷ তবে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি মনে করে যে তৃণমূলের দলগত দ্বন্দ্বের ফলে তারা অতিরিক্ত সুবিধা পাবে৷   


সিপিএমের উত্তর ২৪ জেলা কমিটির সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, "এবার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণআন্দোলনের পরিবেশে ভোট হচ্ছে। তৃণমূলের দুর্নীতি, দুষ্টুমি ও হুমকি সংস্কৃতির বিরোধিতা করতে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমেছে। সিপিএম বা বামে কেউই এখানে প্রার্থী দেয়নি। তারা সিটটি আইএএফকে ছেড়ে দিয়েছে।   


আইএসএফ-এর জেলা সভাপতি তাপস ব্যানার্জী বলেন, "রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নয়, বিভক্ত ও এলাকা দখলের জন্য তৃমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে। এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব উপনির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। যদি মানুষ ভোট দিতে পারে। আমরা ভালো করব।"   


বসিরহাটের বাসিন্দা, জেলা কংগ্রেস (গ্রামীণ) সভাপতি অমিত মজুমদার বলেন, “বিভাগ নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে সাধারণ মানুষ হতাশ। এটি অবশ্যই ভোটে প্রভাব ফেলবে।" বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্রের মতে, "তোলাবাজি এবং ভেড়ির টাকা লুট নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব এবার বিজেপির উপনির্বাচনে অবশ্যই ফল দেবে।"


তবে দলে উপদলীয় কোন্দলের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। হাড়োয়া থেকে তৃণমূল প্রার্থী রবিউল বলেন, "যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা আমার নির্বাচনী এলাকায় নয়। দলের সিনিয়র নেতৃত্ব বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। নির্বাচনে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।"

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad