প্রেসকার্ড নিউজ,লাইফস্টাইল ডেস্ক,৮ নভেম্বর: হরসিঙ্গার গাছ খুব বড় নয়।এতে গোলাকার বীজ থাকে।এর ফুল খুব সুন্দর এবং খুব সুগন্ধযুক্ত।গাছে ঝাঁকুনি দিলে এগুলো পড়ে যায়।বাতাসের সাথে সাথে দূর থেকে যখন এই ফুলের সুবাস আসে,তখন মনটা খুব খুশি ও আনন্দিত হয়।এই ফুলকে সংস্কৃতে পারিজাত,বাংলায় শিউলি বলা হয়।এই গাছে ছোট সাদা ফুল ফোটে আর ফুলের বোঁটা কমলা রঙের হয়।এই ফুল রাতে ফোটে এবং সকালে মাটিতে পড়ে।হরসিঙ্গার ফুল ঠাণ্ডা ও শুষ্ক।
রুরকির কুনওয়ার হরি সিং,যিনি পারিজাত গাছ নিয়ে গভীর গবেষণা করেছেন তার মতে - যদিও পারিজাত গাছের প্রজাতি ভারতে পাওয়া যায় না,ভারতে একমাত্র পারিজাত গাছটি এখনও উত্তরপ্রদেশের বারাবাঙ্কির অন্তর্গত রামনগর এলাকার বোরোলিয়া গ্রামে রয়েছে।প্রায় ৫০ ফুটের কাণ্ড এবং ৪৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই গাছের বেশিরভাগ শাখাই মাটির দিকে ঘুরে যায় এবং মাটি স্পর্শ করার সাথে সাথেই শুকিয়ে যায়।বছরে মাত্র একবার জুন মাসে এই গাছে সাদা-হলুদ ফুল ফোটে।এই গাছ থেকে শুধু সুগন্ধই বের হয় না,এটি দেখতেও সুন্দর। বয়সের দিক থেকে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার বছর বেঁচে থাকা এই গাছটিকে উদ্ভিদবিদরা অ্যাডেসোনিয়া শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন,যার মধ্যে সারা বিশ্বে মাত্র পাঁচটি প্রজাতি পাওয়া যায়।এর মধ্যে একটি হল 'ডিজাহাট'।পারিজাত গাছ এই ডিজাহাট প্রজাতির অন্তর্গত।
পারিজাত বা হরসিঙ্গারের কিছু অলৌকিক উপকারিতা -
বাত:
পারিজাত গাছের ৫টি পাতা ছিঁড়ে পাথরে পিষে পেস্ট তৈরি করে এক গ্লাস জলে গরম করতে হবে,যতক্ষণ না জল অর্ধেক হয়ে যায়।তারপর ঠাণ্ডা করে পান করলে কুড়ি বছরের পুরোনো বাতের ব্যথা নিরাময় হয়।
হাঁটুর মসৃণতা:
হাঁটু মসৃণ হয়ে গেলে এবং জয়েন্টের ব্যথা কোনও ওষুধে উপশম না হলে হরসিঙ্গার (পারিজাত) গাছের ১০-১২টি পাতা পাথরে পিষে এক গ্লাস জলে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন।যখন এক চতুর্থাংশ জল অবশিষ্ট থাকবে,তখন এটিকে ঠাণ্ডা করুন এবং ফিল্টার ছাড়াই পান করুন।এভাবে ৯০ দিনের মধ্যে মসৃণভাব সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার হবে।যদি কিছু অসুবিধা থাকে তবে নির্দিষ্ট সুবিধা পেতে এক মাসের ব্যবধান দিন এবং ৯০ দিনের জন্য একই ক্রম পুনরাবৃত্তি করুন।
সায়াটিকা:
কম আঁচে হরসিঙ্গার বা পারিজাত পাতা সেদ্ধ করে একটি ক্বাথ তৈরি করুন।সায়াটিকার রোগী এটি পান করলে উপকার পাবেন।এটি বন্ধ রক্তনালী খুলে দেয়,যার কারণে এটি সায়াটিকায় কার্যকর।
চুল পড়া বা টাক পড়া:
হরসিঙ্গার বীজ জলের সাথে পিষে টাকের স্থানে লাগালে মাথায় নতুন চুল গজাতে শুরু করে।শিকড় থেকে নতুন চুল গজাতে শুরু করে।
চিকুনগুনিয়া জ্বর,ডেঙ্গু জ্বর,এনসেফালাইটিস,ব্রেন ম্যালেরিয়া: এর পাতা পিষে গরম জলে মিশিয়ে পান করলে জ্বর সেরে যায় এবং যে জ্বর কোনও ওষুধে নিরাময় হয় না,তা নিরাময় হয়। যেমন- চিকুনগুনিয়া জ্বর,ডেঙ্গু জ্বর, এনসেফালাইটিস,ব্রেন ম্যালেরিয়া - এই সব নিরাময় হয়।হরসিঙ্গারের ৭-৮টি পাতার রস,আদার রস ও মধু মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা পান করলে দীর্ঘস্থায়ী ম্যালেরিয়া জ্বর সেরে যায়।
পাইলস:
পাইলসের চিকিৎসার জন্য পারিজাত একটি ওষুধ।এর একটি করে বীজ প্রতিদিন খেলে পাইলস সেরে যায়।পারিজাত বীজের পেস্ট বানিয়ে মলদ্বারে লাগালে পাইলস রোগীদের উপশম হয়।
যকৃত:
৭-৮টি হরসিঙ্গার পাতার রস আদার রস ও মধুর সাথে সকাল-সন্ধ্যা পান করলে লিভার ও প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া আটকানো যায়।
হৃদরোগ:
এর ফুলও হার্টের জন্য ভালো ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হয়। পারিজাত ফুল ফোটার সময় এই ফুল খেলে বা ফুলের রস বছরে একবার পান করলে হৃদরোগ এড়ানো যায়।
দাদ:
হরসিঙ্গার পাতা পিষে লাগালে দাদ সেরে যায়।দাদ রোগের জন্য এটি খুবই অলৌকিক ওষুধ।
শুকনো কাশি:
পারিজাতের পাতা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে শুকনো কাশি সেরে যায়।
চর্মরোগে:
পারিজাত পাতা পিষে ত্বকে লাগালে চর্মজনিত রোগ সেরে যায়।পারিজাত পাতা দিয়ে তৈরি ভেষজ তেলও চর্মরোগে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি:
হরসিঙ্গার ছালের গুঁড়ো ১ থেকে ২ রতি করে দিনে ৩-৪ বার খেলে কফের আঠালোভাব কমে যায় এবং শ্বাসকষ্টের (অ্যাস্থমা) রোগে উপকার পাওয়া যায়।
দীর্ঘস্থায়ী জ্বর:
মহিলারা পাঁচটি গোলমরিচের সাথে পারিজাতের কুঁড়ি খেলে স্ত্রীরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।পারিজাতের বীজ চুলের সিরাম হিসেবে কাজ করলেও এর পাতার রস দীর্ঘস্থায়ী জ্বর নিরাময় করে।
চুলকানি:
হরসিঙ্গার পাতা ও নাচকি আটা একসাথে পিষে লাগালে বা সোনাগেরু দইয়ে ঘষে দিলে বা হরসিঙ্গার পাতা দুধে পিষে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
বি.দ্র: এই বিষয়বস্তু,পরামর্শ সহ, শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য প্রদান করে।এটা কোনওভাবেই যোগ্য চিকিৎসা মতামতের বিকল্প নয়। আরও তথ্যের জন্য সর্বদা একজন বিশেষজ্ঞ বা আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। প্রেসকার্ড নিউজ এর দায় স্বীকার করে না।
No comments:
Post a Comment