নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়া, ০১ নভেম্বর: গলায় রক্ত জবা, কপালে লাল চন্দন এই বেশেই পূজিতা হন মা মুন্ডমালিনী। হ্যাঁ, মাকে ঠিক এরকমই দেখতে অভ্যস্ত মায়ের ভক্তরা। কিন্তু বাঁকুড়ার সাঁতরা বাড়িতে মা কালী কোনও চিন্ময়ী রূপে নন, এখানে বাড়ির বৌমাকেই কালী রূপে পূজা করা হয়। বাঁকুড়ার সাঁতরা বাড়ির বড় বৌমা হীরাবালা সাঁতরা। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরার শাশুড়ি পূজিতা হলেন মা কালী রূপে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে আসছে এই রীতি।
মা এখানে সাক্ষাৎ জীবন্ত। যেখানে মন্ডপে মন্ডপে বা বিভিন্ন পারিবারিক পুজোতে দেবী কালীর মূর্তি পুজো করা হয়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাঁকুড়া জেলার ইন্দাসের মির্জাপুরে সাঁতরা বাড়িতে মূর্তির পরিবর্তে বাড়ির বড় বৌমাকে কালীর আসনে বসিয়ে পুজো করতে দেখা গেল। বছরের পর বছর হয়ে আসছে এই আচার।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্দাসের মির্জাপুরে সাঁতরা পরিবারের কোনও এক পূর্ব পুরুষ মূর্তি পুজো না করার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। পরিবর্তে সোনা অথবা অষ্টধাতুর পুজো করার নির্দেশ পান। কিন্তু ওই সময় আর্থিক সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। সেজন্য মানবীকেই দেবী হিসাবে পুজো করা হয়। সেই থেকে আজও পরিবারের বড়ো বধূকে পুজো করার নিয়ম চলে আসছে।
পরিবারের গৃহবধূ হীরাবালা সাঁতরা গত ৩৯ বছর ধরে মা কালীরূপে পূজিতা হয়ে আসছেন। পুজোর দিন তাঁকে দেবীর আসনে বসানো হয়। গলায় রক্তজবার মালা ও কপালে রক্তচন্দনের তিলক আঁকা হয়। পুজোর সময় স্বয়ং মা কালী হীরাবালাদেবীর শরীরে ভর করায় তিনি কার্যত ঘোরের মধ্যে থাকেন। পুরোহিত তাঁকে দেবী রূপে পুজো করেন। আশেপাশের দর্শনার্থীরা জীবন্ত কালীর পুজো দেখতে সাঁতরা বাড়িতে ভিড় জমান।
হীরাবালা দেবী বলেন, 'প্রায় ৩৯ বছর ধরে আমাকে দেবীর আসনে বসানো হয়। মায়ের ইচ্ছাতেই আমি পবিত্র ওই আসনে বসি। পুজোর সময় আমি বাস্তব জগত থেকে যেন হারিয়ে যাই। অদ্ভুত এক অনুভুতি আমাকে ঘিরে রাখে। পুজোর পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হই।'
No comments:
Post a Comment