প্রেসকার্ড নিউজ,লাইফস্টাইল ডেস্ক,২৪ নভেম্বর: জীব,জগৎ ও জীবনকে ঘিরেই সমস্ত ধারণা,মত ও মতের পার্থক্য জন্ম নেয়,বিস্তৃত হতে থাকে এবং বিভিন্ন রূপে বিশ্বের মানুষের মনে নিবন্ধিত হয়।এই বৈচিত্র্যময় ধারণা এবং মতামত সময়রেখা অনুসারে মানুষের স্মৃতিতে উঠতে বা সেট হতে থাকে।বিশ্বে প্রচলিত বিভিন্ন মতামতের গভীরে নজর দেওয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বুঝতে শুরু করে যে কীভাবে বিভিন্ন মানুষ তাদের চারপাশকে দেখে,চিন্তা করে এবং বোঝে।
এই জ্ঞান নিজের কাছে,অন্যদের কাছে,এমনকি সমগ্র বিশ্বের কাছেও পরিচিত হতে থাকে।প্রকৃতপক্ষে,রায় বা মতামতও একটি ধারণা এবং মতের পার্থক্যও ধারণার বাইরে আর একটি ধারণা।যেকোনও জীবকে প্রাণবন্ত রাখার জন্য জীবের চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত খাবার পাওয়া জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজন।মানুষ এবং অন্যান্য মানবেতর প্রাণীর খাদ্য প্রক্রিয়ায় খাদ্যের প্রাকৃতিক শৃঙ্খল একই।জলচর,নভোচর এবং স্থলচর- এই তিন শ্রেণীর জীবই মূলত তাদের প্রাকৃতিক খাদ্য শৃঙ্খলের উপর নির্ভরশীল।
এতদসত্ত্বেও মানব সমাজ খাদ্য শৃঙ্খলে এত বেশি মতভেদ সৃষ্টি করেছে যে,এটি মানব খাদ্য শৃঙ্খলের ইতিহাসের একটি স্বতন্ত্র ও অনন্য মাত্রা হয়ে উঠেছে।অ-মানুষের জন্য যারা স্বাধীন, খাদ্যের উপর তাদের স্বাভাবিক নির্ভরতা তাদের জীবনকাল ধরে চলতে থাকে,কমবেশি তাদের খাদ্য শৃঙ্খলের আকারে সেই জায়গায় প্রকৃতিতে যা কিছু পাওয়া যায় তার উপর।কোনও প্রাণী যদি মানুষের পোষা সঙ্গী হয়,তবে তাদের পালনকারী মানুষের তাদের খাওয়ানো খাবারের উপর নির্ভর করতে হবে।
কিন্তু সারা পৃথিবীর মানুষ কখনোই নিজের খাদ্যে তৃপ্ত হয় না। একই সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন নিয়ে নানা প্রশ্ন ও অসংযত মন্তব্য মানুষের সব সময় থেমে থাকে এবং চিন্তা-ভাবনা সীমাহীন ধ্বংসাত্মক বা অনিয়ন্ত্রিত করে তোলে মন্তব্য।মন্তব্যগুলি জ্ঞাতসারে বা অজান্তে চলতেই থাকে। বিপরীতে,মানুষের চিন্তাভাবনা প্রক্রিয়ায় নতুন কিছু করার এবং আবিষ্কার করার একটি অবিরাম এবং অনন্য সিরিজও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
একভাবে মানুষ তার অনিয়ন্ত্রিত ইচ্ছার মালিক।মানুষই একমাত্র জীব যে শুধু তার পুষ্টির জন্য খাবার খায় না।মানুষ তার রুচি,স্বাদ ও অবস্থার উপর ভিত্তি করে খাদ্য গ্রহণ করে।
মানুষের খাওয়ার প্রক্রিয়ায় এমন কিছু নেই যে সে সবসময় ক্ষুধার্ত হলেই খাবে।সে যে কোনও সময় এবং যে কোনও জায়গায় খেতে পারে।একই কথা চিন্তাভাবনা এবং বোঝার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য এবং অন্যের জীবনে হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্রেও একইভাবে।মানুষ কখনই তার খাদ্য সম্পর্কে স্থির থাকতে পারে না।কেউ যখন খুশি যা খুশি খেতে পারে,না চাইলেও খেতে পারে,কিছু খাবার দেখলে মনে হয় সে খেতে শুরু করে।এর ফলে জীবনে এক ধরনের অভিন্নতা দেখা যায় এবং মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণীদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারা ও জীবনযাত্রায় এমনটি পাওয়া যায় না।
সম্ভবত এই কারণেই মানবসমাজ তার জীবনযাত্রায় খাদ্য সম্পর্কে এত গভীর ও ব্যাপকভাবে চিন্তা-ভাবনা করেছে এবং মতামতসহ মতাদর্শগত ভিন্নতাসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ তৈরি করেছে। যার ফলশ্রুতিতে রয়েছে অগণিত সংখ্যক ডায়েটিশিয়ান এবং ডায়েটিশিয়ানদের একটি চেইন বা বাহিনী গঠন করা হয়েছে যারা কোনও কারণ ছাড়াই মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে নিজেদের মধ্যে মৌখিক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
খাদ্য মানব সমাজের জীবনের একটি অনন্য এবং আকর্ষণীয় দর্শন হয়ে উঠেছে।মূলত,জীবজগৎ দুটি রূপে বিভক্ত- নিরামিষ এবং আমিষভোজী কিন্তু মানুষ সৃজনশীল এবং ধ্বংসাত্মকভাবে নিরামিষ এবং আমিষ খাদ্য এবং খাদ্যতালিকায় এত বৈচিত্র্য গড়ে তুলেছে যে মনে হয় মানুষের খাদ্যাভ্যাস প্রাকৃতিক ক্ষুধা মেটানো বা সৃজনশীল শক্তির ক্ষুধা মেটানো।
নিরামিষ এবং আমিষ- উভয় খাবারের জীববৈচিত্র্য অফুরন্ত।এমনকি নিরামিষাশীদের মধ্যেও মতের পার্থক্য সীমাহীন।একজন আমিষভোজী,নিরামিষাশী মানুষের জন্য করুণার বশবর্তী হয়ে নিরামিষাশীরা কীভাবে আজীবন নিরামিষ খেয়ে থাকতে পারে সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং নিরামিষাশীদের ঘাস-ভোজী বলে অভিহিত করে।আবার নিরামিষভোজী মানুষের মনে এই দ্বিধা চলতেই থাকে যে,তারা কীভাবে কারও জীবন শেষ করে কোনও জীবকে তাদের ব্যক্তিগত খাবারে পরিণত করতে পারে?
মানুষের পেটের ক্ষমতা সীমিত,কিন্তু মানুষের মনের ক্ষমতা অসীম।এই কারণে মানুষ তার খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে ব্যাপক বৈচিত্র্য সহ অনন্য খাবার খাওয়া,রান্না এবং খাওয়ানো সংক্রান্ত একটি শাস্ত্র তৈরি করেছে।যেখানে মানুষের খাদ্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে মহাত্মা গান্ধী প্রদত্ত সূত্রটি খুবই সহজ যে,ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাওয়া প্রকৃতি এবং ক্ষুধা ছাড়া খাওয়া বিকৃততা। মানুষ সহজে সারল্যকে আত্তীকরণ করতে পারে না।সেই কারণেই মানুষের খাদ্য প্রক্রিয়া দিন দিন জটিলতা গ্রহণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়।
খাদ্য হল জীবনের প্রয়োজনীয় শক্তির মূল উৎস।খাদ্য ছাড়া জীবনের গতি শ্লথ হয়ে যায় এবং খাদ্যের মাত্রাধিক্য বা অভাবের কারণে জীবনের স্বাভাবিক রূপ পরিবর্তিত হতে থাকে।খাদ্য,যা জীবনের অপরিহার্য শক্তি,সেই আকারে বিদ্যমান।কিন্তু মানুষের মনের অন্তহীন গতিবিধির কারণে এটি কেবল জীবনের প্রবাহ নয়,সারা বিশ্বে খাদ্য হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক আন্দোলন এবং কর্মসংস্থান।এটি অবিরাম ক্রিয়াকলাপের একটি ক্রম হয়ে উঠেছে যা সারা জীবন চলতে থাকে এবং এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তীতে নতুন পরীক্ষার ভিত্তি প্রদান করে।
খাদ্যের জন্য উপলব্ধ প্রাকৃতিক শৃঙ্খল এবং মানবসৃষ্ট খাদ্যের ব্যবসা প্রকৃতি এবং মানুষের সৃষ্টির এক অনন্য সংমিশ্রণে পরিণত হয়েছে।রক্ষাকারী,হত্যাকারী এবং ত্রাণকর্তার ত্রিবেণী সঙ্গম এতে।প্রশ্ন জাগে যে খাদ্য কেবলই জীবনের শক্তির মূল উৎস নাকি প্রাণের স্বাভাবিক প্রবাহ?যা জীব,জগত,গাছপালা ও জীবনে নিরন্তর প্রবাহিত হয়।
No comments:
Post a Comment