নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা, ০৮ নভেম্বর: পরীক্ষায় অসাধু কাজকর্ম ঠেকাতে জুনিয়র চিকিৎসকদের পরীক্ষার লাইভ স্ট্রিমিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। আরজিকরে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের পর রাজ্য জুড়ে ধর্মঘট করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অবকাঠামো পরিবর্তনের জন্য ১০ দফা দাবী নিয়ে অনশনে বসেন তারা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দাবীগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকার অধিকাংশ দাবী মেনে নিয়েছে। ওই বৈঠকেই পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। হাসপাতালে 'থ্রেট কালচার' বা 'থ্রেট কালচার' নিয়ে আলোচনায় জুনিয়র চিকিৎসকরা পরীক্ষায় কারচুপি, টাকা নিয়ে পাস করা, প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রচারের আয়োজন করছে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে সিসিটিভি বসানো হবে নজরদারি করতে। পরীক্ষা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রেকর্ড করা হবে ফুটেজ, যা সংরক্ষণ করা থাকবে এক বছর সময় পর্যন্ত। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বা পরিচালকদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বৈঠকে চিকিৎসকদের পরীক্ষা কড়াকড়িতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষা পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা না থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেসময় সতর্ক করেছিলেন যে ষ, পরীক্ষায় কাউকে "সাঁতার কাটতে" দেওয়া হবে না। এরপরই শুরু হয় কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত। বিষয়টি লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, প্রতিটি পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি দিনের সিসিটিভি ফুটেজ আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন দিনের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে এসব ফুটেজ জমা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদি নিয়ম মানা না হয়, তাহলে কলেজের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করা হবে। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবস্থা করা হলেও সবাই তা দেখতে পাবেনা। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চলবে সম্প্রচার। সম্প্রচার পর্যবেক্ষণ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার হলে বসে কেউ যাতে কোনও অন্যায় উপায় অবলম্বন করতে না পারে সেজন্য এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
চিকিৎসকদের পরীক্ষায় অনেক ক্ষেত্রেই আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে টয়লেট। টয়লেটে উত্তর পত্রের পেপারও পাওয়া গেছে। সেখানেও থাকবে কড়াকড়ি। পরীক্ষকরা পাহারা দেবেন টয়লেট। পরীক্ষার সময় কেউ যেন হলের বাইরে টয়লেটে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করা হবে।
শেষ মুহূর্তের যান্ত্রিক ত্রুটি এড়াতে কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার একদিন আগে প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করবে। প্রশ্নপত্র ছাপানোর সময় শুধুমাত্র অধ্যক্ষ, পরিচালক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত আধিকারিক উপস্থিত থাকতে পারবেন। প্রিন্টিং প্রক্রিয়াও সিসিটিভি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। পরীক্ষার দিন সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে প্রশ্নপত্র খোলা হবে।
এছাড়া পরীক্ষা নিরীক্ষক, পরীক্ষক, কেন্দ্র ইনচার্জ নিয়োগ এবং তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে। পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে কঠোর স্ক্রিনিং প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পরীক্ষার পরে অ্যাকাউন্ট দেখা, ওয়েবসাইটে নম্বর আপলোড করা এবং পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা উচিৎ।
No comments:
Post a Comment