প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৯ ডিসেম্বর: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং-এর শেষকৃত্যের আগুন এখনও ঠাণ্ডা হয়নি, আর এরই মধ্যে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও বিজেপি তাঁর শেষকৃত্য নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪) কংগ্রেস দাবী করেছে যে, মনমোহন সিংয়ের রাজকীয় শেষকৃত্য ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের 'অসম্মান ও অব্যবস্থাপনার চমকপ্রদ প্রদর্শন'। অন্যদিকে বিজেপি রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করে বলেছে যে, তিনি 'সস্তা রাজনীতি' করছেন।
কংগ্রেস নেতা পবন খেদা বলেছেন, "ডাঃ মনমোহন সিংয়ের রাজকীয় ছিল অসম্মান ও অব্যবস্থাপনার একটি চমকপ্রদ প্রদর্শন।" সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স পোস্টে তিনি লেখেন, "ডিডি (দূরদর্শন) ছাড়া কোনও সংবাদ সংস্থাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি; ডিডি মোদী এবং শাহের ওপর ধ্যান কেন্দ্রিত করে, সবেমাত্র ডাঃ সিং-এর পরিবারকে কভার করে। ডাঃ সিং-এর পরিবারকে খুব মুশকিল ভাবেই কভার করে। ডাঃ সিং-এর পরিবারের জন্য মাত্র তিনটি চেয়ার সামনের সারিতে রাখা হয়। কংগ্রেস নেতাদের, তাঁর মেয়েদের এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য আসনের ব্যবস্থায় সংগ্রাম করতে হয়েছিল।"
তিনি আরও বলেন, "প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা তাঁর বিধবা স্ত্রীর হাতে জাতীয় পতাকা হস্তান্তরের সময় বা গার্ড অব অনারের সময় উঠে দাঁড়ানোর দরকার মনে করেননি। শেষকৃত্যের চিতার চারপাশে পরিবারকে পর্যাপ্ত জায়গা দেওয়া হয়নি। কেননা একদিকে সৈনিকেরা ঘিরে ছিলেন। জনসাধারণকে ভিতরে আসতে বাধা দেওয়া হয় এবং বাইরে থেকেই তাঁরা অনুষ্ঠান দেখতে বাধ্য হন।"
পবন খেদা আরও বলেন, "অমিত শাহের কনভয় শেষকৃত্যের মিছিলে ব্যাঘাত ঘটায়, পরিবারের যানবাহন বাইরে রেখেছিল। গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং পরিবারের সদস্যদের খুঁজে বের করে ভিতরে ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল। শেষকৃত্যের নিয়ম পালন করা পৌত্রকে চিতা পর্যন্ত পৌঁছাতে জায়গার জন্য সংঘর্ষ করতে হয়েছিল। বিদেশী কূটনীতিকদের অন্য কোথাও বসতে দেওয়া হয় এবং তাঁরা নজরেও আসেননি। আশ্চর্যের বিষয় হল ভুটানের রাজা যখন উঠে দাঁড়ালেন, তখন প্রধানমন্ত্রী দাঁড়াননি। পুরো শেষকৃত্যের স্থানটি এতটাই খারাপভাবে সাজানো হয়েছিল যে অংশ নেওয়া অনেক লোকের জন্য কোনও জায়গা অবশিষ্ট ছিল না। এমন মহান রাজনীতিবিদের সাথে এই অপমানজনক আচরণ তাঁর অগ্রাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি সরকারের অসংবেদনশীলতা প্রকাশ করে। ডক্টর সিং মর্যাদার প্রাপ্য, না এই লজ্জাজনক দৃশ্যের।"
এর পাশাপাশি, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি ভেনুগোপাল বলেছেন, "জেপি নাড্ডা এবং বিজেপি শালীনতার সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে এবং প্রকৃতপক্ষে গত দুদিনে বিজেপির নির্লজ্জ ভণ্ডামি এবং সস্তা রাজনৈতিক কৌশল প্রকাশ করতে আমাদের বাধ্য করেছে। ডঃ মনমোহন সিং জি-এর শেষকৃত্যের জঘন্য ব্যবস্থা ও সরকারের আচরণ ছিল অত্যন্ত অপমানজনক এবং এটা সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সরকার কীভাবে তুচ্ছ রাজনৈতিক কারণে তাঁর মর্যাদা কমাতে আগ্রহী। পরিবারকে অপমান করা হয় এবং ড. সিং-এর মর্যাদার সাথে সামগ্রিক মর্যাদা এবং প্রোটোকলের সম্পূর্ণ অভাব ছিল। ডঃ মনমোহন সিংয়ের এই গুরুতর অপমান অগ্রহণযোগ্য এবং ডঃ সিংয়ের শেষকৃত্য নিয়ে রাজনীতি করার জন্য ভারত প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারকে কখনই ক্ষমা করবে না।"
এই ইস্যুতে পাল্টা রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসকে নিশানা করেন বিজেপি সভাপতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা। তিনি বলেন, "এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং বর্তমান কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরেও রাজনীতি করা থেকে বিরত হচ্ছেন না। কংগ্রেসের এমন খারাপ চিন্তাভাবনার নিন্দার পরিমাণ যথেষ্ট নয়। যে কংগ্রেস মনমোহন সিংকে জীবিত অবস্থায় কখনই সত্যিকারের সম্মান দেয়নি, এখন তাঁর সম্মানের নামে রাজনীতি করছে।"
তিনি আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার মনমোহন সিংয়ের স্মৃতিসৌধের জন্য জায়গা বরাদ্দ করেছে এবং তাঁর পরিবারকেও এটি সম্পর্কে অবহিত করেছে।' নাড্ডা বলেন, "তবুও, কংগ্রেস মিথ্যা ছড়াচ্ছে... রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের এই ধরনের সস্তা রাজনীতি এড়ানো উচিৎ।"
কী বললেন রাহুল গান্ধী?
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেন, "ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার নিগমবোধ ঘাটে মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য করিয়ে ভারত মাতার মহান পুত্র এবং শিখ সম্প্রদায়ের প্রথম প্রধানমন্ত্রী" কে অপমান করেছে।"
No comments:
Post a Comment