প্রেসকার্ড নিউজ,লাইফস্টাইল ডেস্ক,৬ জানুয়ারি: অনেক সময় বাড়িতে বা বন্ধুদের সাথে একই প্লেটে খাবার খাওয়ার রেওয়াজ আছে।এটি প্রেম এবং স্নেহ প্রকাশের একটি উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়।কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন এটা করা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে?স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে,অন্যের এঁটো খাবার খাওয়া বা একই প্লেটে ভাগ করে খাওয়া অনেক মারাত্মক রোগকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে।আসুন সহজ ভাষায় বিস্তারিত বুঝি।
এঁটো খাওয়ার অসুবিধা -
সংক্রমণের ঝুঁকি:
আমরা যখন অন্য কারও এঁটো খাবার খাই,তখন তাদের মুখ থেকে আসা ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস আমাদের প্লেটে চলে আসে।সেই ব্যক্তি যদি সর্দি,কাশি,ফ্লু বা পেট সম্পর্কিত রোগের মতো কোনও সংক্রমণে ভুগছেন,তবে এই সংক্রমণটি সহজেই আমাদেরও হতে পারে।বিশেষ করে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
হজমের সমস্যা:
খাবারের পাত্র পরিষ্কার না হলে বা খাবারে ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা পাকস্থলীতে প্রবেশ করে পরিপাকতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।এতে পেটে ব্যথা,বদহজম,ডায়রিয়া বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
পুষ্টির অভাব -
আপনি যখন অন্যদের সাথে একই প্লেট থেকে খাবার খান, তখন আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পাচ্ছেন কি না তা নির্ধারণ করা হয় না।এই অভ্যাস আপনার শরীরে পুষ্টির ঘাটতি ঘটাতে পারে।
অ্যালার্জি এবং ক্রস-দূষণ -
যদি একজন ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট খাবারে অ্যালার্জি থাকে এবং আপনি একই খাবার খান,তাহলে এই অ্যালার্জি আপনাকেও প্রভাবিত করতে পারে।উপরন্তু ক্রস-দূষণ, অর্থাৎ খাদ্যের সাথে অন্যান্য পদার্থ মেশানোর ফলে সংক্রমণ বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
এঁটো খাওয়ার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন -
হাত ধুতে ভুলবেন না:
খাওয়ার আগে এবং পরে হাত ভালোভাবে ধোয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।হাত ধোয়া ময়লা,ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দূর করে যা খাবারের সাথে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।খাওয়ার আগে সাবান ও পরিষ্কার জল দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। আপনি যদি বাড়ির বাইরে থাকেন এবং জল না পাওয়া যায় তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।এই অভ্যাস শুধুমাত্র খাওয়ার সময় নয়,দৈনন্দিন জীবনেও সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।
চামচ এবং পাত্র ব্যবহার করুন:
খাওয়ার সময় সবসময় চামচ,কাঁটাচামচ এবং পরিষ্কার পাত্র ব্যবহার করুন।হাত দিয়ে খাবার পরিবেশন বা খাওয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।কারণ ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস হাত দিয়ে খাবারে প্রবেশ করতে পারে।এছাড়াও নিশ্চিত করুন যে পাত্রগুলি সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার এবং জীবাণু মুক্ত।বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে খাওয়ার সময় কারও ব্যবহৃত চামচ,কাঁটা বা গ্লাস নেবেন না।এই অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অ্যালার্জির জন্য সতর্ক থাকুন -
যদি কোনও ব্যক্তির কোনও বিশেষ খাবারে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে তাকে আগে থেকেই তা জানিয়ে দিন।অ্যালার্জির লক্ষণ,যেমন- ত্বকে ফুসকুড়ি,শ্বাস নিতে অসুবিধা বা পেটে ব্যথা হতে পারে।এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি কারও সাথে খাবার ভাগ করে নেন,তাহলে ক্রস-দূষণ,অর্থাৎ এক খাবার থেকে অন্য খাবারের সাথে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থের মিশ্রণ ঘটতে পারে।এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে।সর্বদা নিশ্চিত করুন যে আপনার বাসন এবং খাবার পরিষ্কার এবং আলাদা।
এঁটো খাওয়া এড়িয়ে চলুন -
এঁটো খাওয়া পরিবার এবং বন্ধুদের মধ্যে ভালোবাসা দেখানোর একটি উপায় হিসাবে বিবেচিত হতে পারে,তবে এটি স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকারক হতে পারে।একই প্লেটে খাবার খেলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।তাছাড়া এই অভ্যাসের কারণে পুষ্টির ঘাটতি,হজমের সমস্যা এবং অন্যান্য রোগ হতে পারে।যতটা সম্ভব আপনার প্লেট আলাদা রাখুন এবং অন্যের এঁটো খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ভালোবাসার সেরা উপায়।
এঁটো খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করবেন কেন?
এঁটো খাওয়া প্রেম এবং স্নেহ দেখানোর একটি উপায় হতে পারে,তবে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।সংক্রমণ,হজমের সমস্যা,পুষ্টির ঘাটতি এবং অ্যালার্জির মতো সমস্যাগুলি এড়াতে এই অভ্যাসটি অবিলম্বে ত্যাগ করা উচিৎ।নিজের এবং আপনার পরিবারের যত্ন নিন,স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ করুন এবং এঁটো খাওয়া এড়িয়ে চলুন।স্বাস্থ্যকর জীবনধারা একটি সুখী জীবনের ভিত্তি।
No comments:
Post a Comment