প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ০৪ জানুয়ারি: পাপুয়া নিউ গিনির পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী ফোর জনজাতি (ফোর ট্রাইব) নিজেদের অনন্য রীতিনীতির জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এই জনজাতি একা থাকতে পছন্দ করত এবং তার অনন্য জীবনধারার জন্য পরিচিত ছিল। যাইহোক, ফোর জনজাতির ইতিহাসে এমন একটি অধ্যায়ও রয়েছে, যা অত্যন্ত ভয়াবহ এবং শিউরে ওঠার মত।
এই জনজাতিতে নরখাদকের প্রথা প্রচলিত ছিল। তাঁরা না শুধু মানুষের মাংস খেত বরং মৃত মানুষের মস্তিষ্ককেও খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করত। এই অদ্ভুত প্রথা (হিউম্যান ব্রেইন ইটিং ট্রেডিশন)-র কারণে এই জনজাতিতে নানা ধরণের রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রায়শই সিনেমায় অতিমানব সম্পর্কে শুনেছেন, যারা অলৌকিক শক্তিতে সমৃদ্ধ। যদিও, ফোর জনজাতির লোকেরা এজন্য মহামানব বলা হত কারণ তারা মানুষের মাংস খাওয়া সত্ত্বেও একটি আশ্চর্যজনক ক্ষমতা তৈরি করে নিয়েছিল। এই জনজাতির মানুষের শরীরে এমন একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিকশিত হয়ে গিয়েছিল, যা তাদের মস্তিষ্ক সম্পর্কিত গুরুতর রোগ থেকে রক্ষা করত। এই ক্ষমতা এতটাই বিশেষ ছিল যে, এটি আজও বিজ্ঞানীদের কাছে একটি রহস্য হয়ে রয়ে গিয়েছে।
২০১৫ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ফোর জনজাতিতে একটি হাড় কাঁপানো ঐতিহ্য ছিল। যখন কোন ব্যক্তি মারা যেত, তখন তারা মৃত ব্যক্তিকে শ্রদ্ধাজলি দিতে তাঁর মাংস খেতেন। এই প্রথায়, মহিলা ও শিশুরা মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্ক খেতেন এবং পুরুষরা অবশিষ্ট দেহের মাংস।
উল্লেখ্য, মস্তিষ্কে বিপজ্জনক এক ধরণের অণু রয়েছে, যা এই প্রথার কারণে মহিলাদের শরীরে প্রবেশ করত। এই অণুটি 'কুরু' নামক একটি ভয়ানক রোগের কারণ হয়, যা প্রাথমিকভাবে জনজাতির প্রায় ২ শতাংশ লোকের প্রাণ কেড়ে নেয়।
ফোর জনজাতির যখন কেউ মারা যেতেন, লোকেরা একটি বিশেষ রকমের উৎসব পালন করতেন। এই উৎসবে তারা মৃত ব্যক্তির মাংস খেতেন। মহিলারা মৃত ব্যক্তির মগজ খেতেন। তারা তাদের মৃত আত্মীয়কে সম্মান জানাতে এমনটি করতেন।
এই জনজাতি বিশ্বাস করত, তাঁরা মৃত ব্যক্তিকে মাটিতে পুঁতে রাখলে বা কোথাও ফেলে রাখলে পোকামাকড় তার দেহ খেয়ে ফেলবে। তারা মনে করতেন, তাদের প্রিয়জনরা মৃত ব্যক্তির দেহ খেয়ে ফেললে ভালো হবে। তারা মৃত ব্যক্তির পিত্তাশয় ছেড়ে দিতেন, কিন্তু তার শরীরের বাকি অংশের মাংস ভেজে-কষিয়ে খেয়ে ফেলতেন।
পাপুয়া নিউ গিনিতে বসবাসকারী কিছু লোক খুব বিপজ্জনক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। নিউ গিনির চিকিৎসকরা এই রোগের সন্ধান পান। এ রোগের কারণে মানুষ হাঁটতে, খাবার খেতে পারতেন না এবং ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়তেন। শেষ পর্যন্ত, তারা এই রোগে মারা যেতেন। এই জনজাতি এই রোগের নাম দিয়েছিল 'কুরু', যার অর্থ 'ভয়ে কাঁপা'। এই জধজাতির প্রায় ২ শতাংশ লোক এই রোগের কারণে মারা যায়। পরে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে, কুরু রোগ একটি বিশেষ ধরনের প্রোটিনের কারণে হয়, যাকে বলা হয় প্রিয়নস। এই প্রোটিনগুলি খুব বিশেষ; এগুলো নিজেরাই নিজেদের বৃদ্ধি করতে পারে এবং অন্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
No comments:
Post a Comment