প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ১২ জানুয়ারি : উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা শুরু হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। দেশের প্রতিটি প্রান্ত এবং বিদেশ থেকে মানুষ এখানে সঙ্গমে স্নান করতে আসেন। প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থে লেখা আছে যে এটি প্রায় ২ হাজার বছর ধরে সংগঠিত হয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, কুম্ভমেলা হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান উৎসব হিসেবেও বিবেচিত হয়। এটি ধর্মীয় তাৎপর্য সম্পর্কে, তবে আজকের এই খবরে আপনি জানতে পারবেন কুম্ভের কি কেবল ধর্মীয় তাৎপর্য আছে নাকি এর পিছনে কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।
মহাকুম্ভ মেলা কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয় বরং এটি মানুষ এবং মহাবিশ্বের মধ্যে সম্পর্কের একটি চমৎকার সঙ্গম। ২০২৫ সালে শুরু হতে যাওয়া মহাকুম্ভ কেবল কোটি কোটি ভক্তকেই আকর্ষণ করবে না, বরং এর আয়োজনের পিছনে জ্যোতির্বিদ্যা ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের উপরও আলোকপাত করবে।
মহাকুম্ভের সূচনা
মহাকুম্ভের সূচনা "সমুদ্র মন্থন" এর পৌরাণিক কাহিনীর সাথে জড়িত। এই কিংবদন্তি অনুসারে, দেবতা এবং অসুররা অমৃত পাওয়ার জন্য সমুদ্র মন্থন করেছিলেন। অমৃত কলশ থেকে যে অমৃত পতিত হয়েছিল তা চারটি স্থানে পড়েছিল - প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী এবং নাসিক। এই স্থানগুলি কুম্ভমেলা আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। 'কুম্ভ' শব্দটি নিজেই অমৃত কলশের প্রতীক, যা অমরত্ব এবং আধ্যাত্মিক পুষ্টির প্রতীক।
জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত ঘটনা
মহাকুম্ভের সময় এবং আয়োজন জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত ঘটনার উপর ভিত্তি করে। বৃহস্পতি, সূর্য এবং চন্দ্রের বিশেষ সংযোগের সময় এই মেলার আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতির ১২ বছরের কক্ষপথ চক্র এবং পৃথিবীর সাথে এর বিশেষ অবস্থান এই ঘটনাটিকে শুভ করে তোলে।
২০২৪ সালে, ৭ ডিসেম্বর, যখন পৃথিবী সূর্য এবং বৃহস্পতির মাঝখানে ছিল, তখন বৃহস্পতি গ্রহ তার বিপরীত অবস্থানে ছিল। এই অবস্থানের কারণে রাতের আকাশে বৃহস্পতি গ্রহ অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এই গ্রহটি বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করবে। এর সাথে সাথে শুক্র, শনি, বৃহস্পতি এবং মঙ্গলের বিশেষ জ্যোতির্বিদ্যাগত ঘটনাগুলি উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞান
মহাকুম্ভের আয়োজন প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা বিজ্ঞানের গভীর উপলব্ধির প্রতিফলন ঘটায়। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং গ্রহগুলির অবস্থানের উপর ভিত্তি করে স্থান এবং সময় উভয়ই নির্ধারণ করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, আমাদের পূর্বপুরুষদের জ্যোতির্বিদ্যা বিজ্ঞান এবং জৈবিক প্রভাব সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ছিল।
কুম্ভের ভৌগোলিক গুরুত্ব
ভূ-চৌম্বকীয় শক্তির ভিত্তিতে কুম্ভমেলার স্থানগুলি নির্বাচন করা হয়েছে। এই স্থানগুলি, বিশেষ করে নদীর সঙ্গমস্থলগুলিকে আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য সহায়ক বলে মনে করা হয়। প্রাচীন ঋষিরা ধ্যান, যোগব্যায়াম এবং আধ্যাত্মিক অগ্রগতির জন্য উপযুক্ত এই স্থানগুলিতে শক্তির প্রবাহ অনুভব করেছিলেন এবং এগুলিকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছিলেন।
কুম্ভে স্নানের বিজ্ঞান
বৈজ্ঞানিক যুক্তি অনুসারে, কুম্ভমেলা মানবদেহের উপর গ্রহ এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব বোঝার জন্য একটি দুর্দান্ত সময়। জৈব-চৌম্বকত্ব অনুসারে, মানবদেহ চৌম্বক ক্ষেত্র নির্গত করে এবং বাহ্যিক শক্তি ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। কুম্ভে স্নান এবং ধ্যানের সময় যে শান্তি এবং ইতিবাচকতা অনুভূত হয় তার পিছনে এই শক্তি প্রবাহই কারণ।
বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গম
গ্রহগুলির অবস্থান কেবল আধ্যাত্মিক তাৎপর্যই রাখে না, বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি পৃথিবী এবং মানুষের উপর এর প্রভাব প্রদর্শন করে। বৃহস্পতি, সূর্য এবং চাঁদের বিশেষ সংমিশ্রণ পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে। এই জ্যোতির্বিদ্যাগত মিলগুলির সময় কুম্ভে স্নানের তাৎপর্য হল আধ্যাত্মিকতা এবং বিজ্ঞানের সমন্বয়।
১৩ জানুয়ারী থেকে শুরু হওয়া ২০২৫ সালের মহাকুম্ভে প্রয়াগরাজে কোটি কোটি ভক্তের সমাগম হবে। এটি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির এক অনন্য সঙ্গমও। জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল এবং আধ্যাত্মিকতার এই মিশ্রণের মাধ্যমে, এই মেলা মানবতার মহাজাগতিক সংযোগ বোঝার একটি চমৎকার সুযোগ প্রদান করবে।
মহাকুম্ভ কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয় বরং এটি প্রাচীন ভারতের গভীর বৈজ্ঞানিক ও জ্যোতির্বিদ্যাগত বোঝাপড়ার প্রতীক। এই মেলা আমাদের শেখায় যে বিশ্বাস এবং বিজ্ঞানের মধ্যে কোনও বিভাজন নেই, বরং উভয়ই একসাথে মানবতার পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে।
No comments:
Post a Comment