কলকাতা: আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। তার এই অপরাধ বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে মনে করেনি আদালত। তাই সোমবার বিচারক অণির্বান দাস সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছেন। আর আদালতের এই রায় ঘোষণার পরেই চরম হতাশা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাজা ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, 'ফাঁসি হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।' সেই সঙ্গে তিনিও মনে করিয়ে দেন এই মামলা জোর করে রাজ্যের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
বর্তমানে উত্তরবঙ্গ সফরে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমাদের হাত থেকে তো কেসটা ইচ্ছে করে কেড়ে নিয়ে চলে গেল। আমরা তো বলেছিলাম আমরা যদি না করতে পারি তাহলে সিবিআইকে দিয়ে দিন। আমাদের কোনও আপত্তি নেই, কারণ আমরা চাই বিচার হোক। এই নরপিশাচদের চরমতম শাস্তি হওয়া উচিৎ। ফাঁসি হলে অন্তত মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।
তিনি বলেন, "আমরা তিনটে মামলায় ফাঁসির অর্ডার করিয়ে দিয়েছি কয়েকদিন আগে। ৫৪ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফাঁসির অর্ডার করিয়ে দিয়েছি। এই কেসে আমাদের সকলের দাবী ছিল, ফাঁসি হোক। বিচারের রায় নিয়ে কিছু বলব না ঠিকই। তবে আমাদের হাতে কেস থাকলে অনেকদিন আগেই ফাঁসির অর্ডার করিয়ে দিতে পারতাম।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, "মা-বাবাকে আমি বলেছিলাম সময় দিন। কিন্তু তার আগেই সিবিআই-এর হাতে তদন্ত চলে গেল। সিবিআই কী করেছে বলতে পারব না, তবে আমি এই সাজায় সন্তুষ্ট নই। ফাঁসি হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।"
সিবিআইয়ের আইনজীবীর কি কোনও খামতি ছিল? সিবিআইয়ের তদন্তে কি কোনও ফাঁক ছিল বলে মনে করেন? এর উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেন, "আমি তা বলতে পারব না। ওরা কী করেছে। তবে আমি তো একজন আইনজীবী। এই ধরণের নরপিশাচদের চরম শাস্তি হওয়া উচিৎ তাই বলছি, ফাঁসি হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।”
প্রসঙ্গত, জয়নগরে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় কিছুদিন আগেই ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে আদালত। তা ছিল এক প্রকার রেকর্ড। ঘটনার ৬২ দিনের মধ্যে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে রায় ঘোষণা করা হয়। শুধু ওই মামলা নয়, এর পর এই রাজ্যেই আরও দুটি খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় আদালত ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে। সেই তুলনায় আরজি কর কাণ্ডের রায় বহু মানুষের কাছেই হতাশাজনক বৈকি!
এছাড়াও আরজি কর কাণ্ডের পর নির্যাতিতার পরিবারকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল রাজ্য সরকার, তা নিয়েও বিস্তর বিতর্ক হয়। এদিন বিচারক জানান, ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে নির্যাতিতার পরিবারকে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি এদিন।
No comments:
Post a Comment