প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২২ জানুয়ারি: মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার। ট্রেনে আগুন লেগেছে, এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তেই ঝাঁপ মারেন অনেক যাত্রী। পুষ্পক এক্সপ্রেসে এই আগুন আতঙ্ক ছড়ায়। আর এদিকে অপর ট্র্যাক থেকে আসা কর্ণাটক এক্সপ্রেসের ধাক্কায় পিষ্ট হন বহু যাত্রী। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রেলওয়ে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বিকেল ৪.১৯ মিনিট নাগাদ পারান্দা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে এই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঘটে।
রেলের আধিকারিকদের মতে, পুষ্পক এক্সপ্রেসের যাত্রীরা ট্রেনের চাকা থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার পরে আগুন লাগার গুজব ছড়িয়ে পড়ে এবং ভয়ে ও প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত ট্র্যাকের উপর ঝাঁপ দিলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। লক্ষ্ণৌ থেকে মুম্বাই যাচ্ছিল ট্রেনটি। যাত্রীরা হঠাৎ ট্র্যাকে এসে পড়লে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
একই সময়ে ওপাশ থেকে কর্ণাটক এক্সপ্রেস আসছিল, ট্রেনের ধাক্কায় ট্র্যাকে ঝাঁপ দেওয়া যাত্রীরা পিষ্ট হন। দুর্ঘটনায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সেন্ট্রাল রেলওয়ের মুখপাত্র স্বপ্নীল নীলা বলেন, "পুষ্পক এক্সপ্রেসের কিছু যাত্রী নিচে নেমে যান এবং সামনে থেকে আসা কর্ণাটক এক্সপ্রেসের সাথে ধাক্কা খান, যার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।"
নাসিক বিভাগীয় কমিশনার প্রবীণ গেদাম এএনআইকে জানিয়েছেন যে, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন। অতিরিক্ত এসপি, এসপি, কালেক্টর এবং অন্যান্য আধিকারিকরাও ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। ডিআরএম ও রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। ৮টি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং রেলওয়ের অতিরিক্ত রেসকিউ ভ্যান ও অ্যাম্বুলেন্সও পাঠানো হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।
জলগাঁওয়ের এসপি মহেশ্বর রেড্ডি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। কর্ণাটক এক্সপ্রেস এই যাত্রীদের পিষে দিয়েছে। আগুন লাগার গুজবে সবাই পুষ্পক এক্সপ্রেস থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।
জলগাঁওয়ে দুর্ঘটনার বিষয়ে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস বলেছেন যে, 'জলগাঁও জেলার পাচোরার কাছে একটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় কিছু লোক মারা গেছেন। আমি তাঁদের প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আমার সহযোগী মন্ত্রী গিরিশ মহাজন এবং পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে কালেক্টরও সেখানে পৌঁছে যাচ্ছেন। সমগ্র জেলা প্রশাসন রেলওয়ে প্রশাসনের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ৮টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। সাধারণ হাসপাতালের পাশাপাশি আশেপাশের অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোও আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গ্লাস কাটার, ফ্লাডলাইট ইত্যাদির মতো জরুরি ব্যবস্থাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা প্রদান করছি। আমি জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করছি।'
পুষ্পক ট্রেন দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় (সিএমও) এই বিষয়ে জানিয়েছে যে, সিএম যোগী দুর্ঘটনায় আহত যাত্রীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও, মুখ্যমন্ত্রী দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো যাত্রীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণান বলেছেন যে, 'জলগাঁওয়ের কাছে অন্য একটি ট্রেনের ধাক্কায় কিছু যাত্রীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর বিষয়ে জানতে পেরে অত্যন্ত দুঃখিত। যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমার সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।'
No comments:
Post a Comment