কলকাতা: আরজি কর হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ধর্ষণ-খুনের শিকার হন ডাক্তারি পড়ুয়া। এই মামলায় ধৃত সঞ্জয়কে সোমবার আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। কিন্তু এই সাজায় সন্তুষ্ট নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রায় ঘোষণার পরেই একথা জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর এবারে নিম্ন আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যাচ্ছে রাজ্য। সোমবার রাতে সমাজমাধ্যমে এই খবর জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। নিজের এক্স হ্যান্ডেল পোস্টে মমতা লিখেছেন, 'আরজি করে জুনিয়র ডাক্তারের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় আদালতের রায় দেখে আমি সত্যিই মর্মাহত যে, এটি রেয়ারেস্ট অব রেয়ার মামলা নয়!"
প্রসঙ্গত, আরজি কর কাণ্ডে সঞ্জয়ের ফাঁসি হবে বলেই অনেকেই মনে করেছিলেন। কিন্তু তা হয়নি বরং এদিন রায় দিতে গিয়ে বিচারক বলেন, 'এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ নয়'। এক্স পোস্টে এদিন এই প্রসঙ্গই তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "আমার পূর্ণ বিশ্বাস এটা বাস্তবেই রেয়ারেস্ট অফ রেয়ায় কেস, যা মৃত্যুদণ্ড দাবী করে।"
তাঁর প্রশ্ন, "নির্নয় কীভাবে এই নিষ্কর্ষে আসতে পারে যে, এটি বিরলতম ঘটনা নয়?" মমতার কথায়, 'আমরা এই সবচেয়ে জঘন্য ও সংবেদনশীল মামলায় মৃত্যুদণ্ডের ওপরে জোর দিচ্ছি।'
উল্লেখ্য, ফারাক্কা, জয়নগর, গুড়াপের ধর্ষণ, নারী নির্যাতনের মামলায় আদালতে অপরাধীর ফাঁসির সুনিশ্চিত করেছে রাজ্য। ওই প্রসঙ্গ টেনে এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও লেখেন, সম্প্রতি ৩-৪ মাসে আমরা এমন অপরাধে অপরাধীদের জন্য মৃত্যুদণ্ড/সর্বোচ্চ সাজার সুনিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। তাহলে এই মামলায় মৃত্যুদণ্ড কেন দেওয়া হল না।
এরপরেই তিনি লেখেন, "আমার দৃঢ়ভাবে মনে হয়, এটা একটা জঘন্য অপরাধ, যার জন্য মৃত্যুদণ্ড আবশ্যক। আমরা এখন উচ্চ আদালতে দোষীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আবেদন করব।"
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৯ অগস্ট ভোরে আরজি কর হাসপাতালে ডাক্তারি পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয়কে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনার তদন্ত যাতে দ্রুত ও সুষ্ঠতার সঙ্গে এগিয়ে যায়, সেজন্য তদারকি করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। এমনকি তিনি বলেছিলেন, 'একজন অ্যারেস্ট হয়েছে। আমাদের সাত দিন সময় দিন। তার মধ্যে তদন্ত শেষ করতে না পারলে না হয় সিবিআইকে তদন্তের ভার দেওয়া হোক।'
কিন্তু চারদিনের মাথায় আদালতের নির্দেশে কলকাতা পুলিশ, সিবিআইকে তদন্তভার হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিল। সিবিআইও সঞ্জয়কেই দোষী পায় এবং তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করে। কিন্তু আদালত এদিন সঞ্জয়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে। আর দোষীর ফাঁসির সাজা না হওয়ায় এদিন আর নিজের ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার আদালত রায় ঘোষণার পর মমতার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, 'ফাঁসি হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।' এরপর রাত পৌনে আটটা নাগাদ তিনি জানিয়ে দিলেন নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যাচ্ছে রাজ্য।
No comments:
Post a Comment