প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ০৯ ফেব্রুয়ারি: দিল্লী নির্বাচনে আম আদমি পার্টিকে হারিয়েছে বিজেপি। ২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আপ এবার ২২টি আসন নিয়ে খারাপভাবে হেরেছে। এছাড়া, কংগ্রেস দিল্লীতে একটি আসনও জিততে না পারলেও, আপ-কে সরিয়ে অর্ধেক কাজ করেছে। পরাজয়ের পর কেজরিওয়াল বলেছেন, বিরোধী হিসেবে তিনি দিল্লীর মানুষের আওয়াজ তুলতে থাকবেন। অন্যদিকে, কংগ্রেস বলেছে যে, কেজরিওয়ালের মিথ্যার রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এবং আগামী নির্বাচনে আপ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বিশেষ বিষয় হল কংগ্রেসের মতো বিজেপিও দিল্লীর রাজনীতিতে আপ-এর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এর পেছনে যেসব যুক্তি রয়েছে
১. কেজরিওয়ালের কথায় ভরসা নেই জনতার -
আম আদমি পার্টি মাত্র এক মেয়াদে সিংহাসন থেকে মাটিতে পড়ে গেছে। আপ (এএপি) ২০১৫ সালে প্রথমবার একা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, সেই সময় ৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। এর পরে, ২০২০ সালের নির্বাচনে ৬২টি আসন পেয়েছিল আপ, তবে এবার মাত্র ২২টি আসনেই গুটিয়ে যায়। এর থেকে স্পষ্ট যে, কেজরিওয়ালের পরিকল্পনা এবং বড়-বড় কথায় জনতা ভরসা হারিয়েছে।
এমতাবস্থায় বিরোধী দলে বসে আপ যেই আওয়াজ তুলুক না কেন, জনতা তার ওপর ভরসা করার আগে ১০০ বার ভাববে। কারণ কেজরিওয়াল সহ গোটা আম আদমি পার্টির নেতৃত্ব নিজেদের একটা মিথ্যা ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে কেজরিওয়ালের অবস্থা আরও খারাপ হতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে।
২. কংগ্রেস বনাম বিজেপি হবে পরবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বিতা!
কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে দিল্লীর ক্ষমতায় জায়গা করে নিয়েছে আম আদমি পার্টি। কংগ্রেস এটি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিল, তাই তারা এই নির্বাচনে একা লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে নিজে ক্ষমতায় না এলেও অবশ্যই আপ-কে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। কংগ্রেস আগে থেকেই জানত যে, ১৪-১৫টি আসন ছেড়ে দিলে বাকি আসনগুলিতে কংগ্রেসের খুব বেশি প্রভাব পড়বে না, কিন্তু তবুও দলটি সমস্ত আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, যে কোনও উপায়ে আপ-কে ধ্বংস করা। এখন যেহেতু আপ (এএপি) নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, আগামী নির্বাচনে কংগ্রেসের চিন্তাভাবনা হবে যে প্রতিযোগিতাটি বিজেপি বনাম কংগ্রেসের মধ্যে হোক, না কি কোনও তৃতীয় দল এতে পা রাখতে পারে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও বলছেন যে, কংগ্রেস দিল্লীর অর্ধেক যুদ্ধ জিতে নিয়েছে, তবে সম্পূর্ণ জয়ের জন্য কংগ্রেসকে জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জোর আওয়াজ তুলতে হবে। এমনটা হলে কংগ্রেসের প্রতি ক্ষুব্ধ ভোটাররা দলে ফিরে আসতে পারে। এছাড়াও, কংগ্রেস কর্মীরাও উৎসাহিত হবেন যে, দলটি আসন্ন নির্বাচনে শক্তপোক্ত ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সামনের পথ কঠিন হতে পারে আম আদমি পার্টির।
৩. ক্যাগ (CAG) রিপোর্ট করবে কেজরিওয়ালের দুর্নীতি ফাঁস-
গতকাল দিল্লীতে বিজেপির জয়ের সাথেই, প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে, বিধানসভার প্রথম অধিবেশনেই ক্যাগ (সিএজি) রিপোর্ট সদনে পেশ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিল্লীর প্রতিটি দুর্নীতির তদন্ত হবে। উল্লেখ্য, এমন পরিস্থিতিতে কেজরিওয়াল আবারও জেলে যেতে পারেন।
যতদিন পর্যন্ত আপ ক্ষমতায় ছিল, কেজরিওয়াল এবং আপ নেতারা তদন্তে কম-বেশি বাধা তৈরি করেছিল, কিন্তু এখন দুর্নীতিবাজদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে এবং প্রমাণিত হলে তাদের শাস্তিও দেওয়া হবে। শীসমহলের দুর্নীতি হোক, মদ কেলেঙ্কারির মামলা হোক বা জল বোর্ডের কেলেঙ্কারি, এখন সব দুর্নীতির তদন্ত হবে। এতে কেজরিওয়ালের সমস্যা আরও বাড়বে।
৪. যমুনা পরিষ্কার করে মজবুত হবে বিজেপি-
এবারের নির্বাচনে যমুনা পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি খবরে ছিল। কেজরিওয়াল ২০১৫ সালে যমুনা পরিষ্কারের কথা বলেছিলেন, কিন্তু তা সম্পূর্ণ করতে পারেননি। কেজরিওয়াল আবারও ২০২০ সালে যমুনা পরিষ্কার করার কথা বলেছিলেন কিন্তু তা সম্পূর্ণ করতে পারেননি। এবার কেজরিওয়াল আবার একই সুর গাইছিলেন যে, সুযোগ পেলে তিনি অবশ্যই যমুনা পরিষ্কার করবেন, কিন্তু এবার তাঁর কথায় জনতা ভরসা করেনি।
বিজেপিও ভালো করেই জানে যে, আগামী নির্বাচনেও যমুনা পরিষ্কার একটি বড় ইস্যু হতে চলেছে। এমতাবস্থায়, বিজেপি অবশ্যই এই দিকে মনোযোগ দেবে এবং যমুনা পরিষ্কার করে পরের বারও সহজেই ক্ষমতায় আসতে পারবে। এনিয়ে গতকাল যমুনা পরিষ্কার নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
৫. আপ-এর কোর ভোটার কীভাবে কেড়ে নেবে বিজেপি?-
কেজরিওয়াল লাগাতার দাবী করছেন যে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে সমস্ত বিনামূল্যের যোজনা বন্ধ করে দেবে। তবে নির্বাচনের আগে, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, জনস্বার্থে যা কিছু কল্যাণমূলক প্রকল্প রয়েছে, সেগুলি বন্ধ করা হবে না এবং লোকেরা সেসবের সুবিধা পেতে থাকবেন।
এটিকে বহাল রেখে, ব্আপ-এর সেই ভোটারদেরও বিজেপি নিজের করে নেবে, যারা আম আদমি পার্টির মূল ভোটার হিসাবে বিবেচিত হয়, যাঁদের কারণে আপ ক্ষমতায় এসেছিল। এই লোকেরা আপ-কে ভোট দিচ্ছিলেন কারণ সরকার তাদের বিনামূল্যের রাবড়ি দিচ্ছিল। বিজেপিও যদি সেই যোজনাগুলি লাগু রাখে, তাহলে ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রশ্নই উঠবে না।
৬. কেজরিওয়ালের অসমাপ্ত কাজ শেষ করবে বিজেপি
কেজরিওয়াল সরকারের মধ্যে এরকম আরও ২-৩টি বিষয় রয়েছে, যেগুলি কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ছিল। দিল্লীর দূষণের বিষয়টি তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়া প্রতিটি বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা এবং রাস্তাঘাটকে গর্তমুক্ত করা। কেজরিওয়াল বলেছিলেন যে, 'আমরা দিল্লীর রাস্তাগুলিকে গর্তমুক্ত করব', কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি। তিনি সব বাড়িতে বিশুদ্ধ খাবার জল পৌঁছে দিতে পারেননি। কেজরিওয়াল নিজেই এটি একটি খোলা মঞ্চে মেনে নিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে, এখন বিজেপি বাস্তবে এই সমস্যার সমাধান করবে, যার কারণে আপ ভোটারদেরও বিজেপির প্রতি আস্থা থাকবে এবং তাঁরা আবার বিজেপির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাইবে। এই বিষয়গুলো দেখলে মনে হয় দিল্লীতে আপ (এএপি)-এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। আগামী নির্বাচনে আপ-এর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
No comments:
Post a Comment