প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ০৬ ফেব্রুয়ারি: অবৈধ ভাবে প্রবেশ করতে যাওয়া ভারতীয় অভিবাসীদের সেনার বিমানে চাপিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকা। হাতে হাতকড়া, পায়ে শিকল পরে ফিরে আসতে হয়েছে ভারতে। সেই নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জোর তরজা। ভারতীয় অভিবাসীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ নিয়ে বৃহস্পতিবার উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। আমেরিকা থেকে ভারতে আনা ১০৪ জন অবৈধ অভিবাসীর সাথে অমানবিক আচরণের জন্য বিরোধীরা আজ রাজ্যসভায় সরকারের সমালোচনা করেছে। সমালোচনার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত বিবৃতি দিতে হয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। এটা নতুন কিছু নয় বলেও যুক্তি দেন তিনি।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের পরে কংগ্রেস সাংসদ সংসদে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, 'কলম্বিয়ার মতো একটি দেশ যখন অবৈধ অভিবাসীদের সাথে খারাপ আচরণের ক্ষেত্রে আমেরিকাকে লাল চোখ দেখাতে পারে, তবে ভারত কেন তা করতে পারে না?'
কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন যে, আজ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কথা বলা দরকার। আজ ১৪০ কোটি ভারতীয় হৃদয়ে ছেদ হয়েছে। আমেরিকা থেকে ফিরে আসা মানুষের স্বপ্ন মাটিতে পড়ে আছে, হাতে বেরি আর আত্মাভিমান ধুলিস্যাৎ হয়েছে।
সুরজেওয়ালা, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৪ স্পষ্টীকরণ চেয়ে প্রশ্ন করেন, "সরকার কি জানত যে ৫ ফেব্রুয়ারি, ১০৪ জন ভারতীয়কে অমানবিকভাবে তাদের হাতে হাতকড়া এবং পায়ে শিকল দিয়ে ভারতে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে একটি মাত্র টয়লেট ছিল। সরকার এ বিষয়ে নীরব ছিল। সরকার কি জানে যে, সেখানে ৭.২৫ লক্ষ ভারতীয় আছেন, যাদের আমেরিকা একইভাবে সেখান থেকে বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে? এটা কি ভারতীয়দের প্রতি একজন সন্ত্রাসী বা উগ্ৰবাদী আচরণ নয়? নাকি এটা মানবিক ব্যবহার, সরকার কি এ বিষয়ে মন্তব্য করবে?"
সুরজেওয়ালা দ্বিতীয় পয়েন্টে সরকারের কাছে স্পষ্টীকরণ দাবী করেন, আরও কত হাজার ভারতীয় রয়েছে যাদের আমেরিকা ডিটেনশন সেন্টারে একই অমানবিক পদ্ধতিতে আটক করে রেখেছে। তাঁদের অবস্থা কি এবং আপনি কি তাদের কাউন্সেলর অ্যাক্সেস দিয়েছেন?
সরকারের কাছ থেকে তৃতীয় ব্যাখ্যা চেয়ে রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, 'এবার কি ট্রাম্প সরকার, নমস্তে ট্রাম্পের মতো কর্মসূচিতে ১০০ কোটি টাকা খরচ করা সরকার, যে সরকার তার প্রেমে পড়েছে, সেই সরকার কি বুঝতে পারে যে, এই ৭.২৫ লাখ মানুষ চলে গেছে কারণ সরকার, যে সরকার প্রতি বছর ২ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা খাবার বা ভালো জীবন দিতে পারেনি। এই লোকেরা তাদের স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে, এক একর জমি বিক্রি করে এবং তাঁদের বাড়ি বন্ধক রেখে সেখানে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।"
সরকারের কাছ থেকে চূড়ান্ত ব্যাখ্যা চেয়ে কংগ্রেস সাংসদ বলেন, কলম্বিয়ার মতো একটি ছোট দেশ এবং তার রাষ্ট্রপতি যখন লাল চোখ দেখিয়ে আমেরিকাকে নিজের
নাগরিকদের বেইজ্জত ও অপমানিত করার জন্য সঠিক পথ দেখাতে পারে, তাহলে আপনি কেন নয়।
উল্লেখ্য, কলম্বিয়ার সরকার অবৈধ কলম্বিয়ান অভিবাসী বোঝাই মার্কিন সেনাবাহিনীর দুটি বিমানকে অবতরণের অনুমতি দেয়নি। প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেছেন, ট্রাম্পের আচরণ ঠিক নয়। তিনি বলেন, 'আমেরিকা অভিবাসীদের সাথে অপরাধীদের মতো আচরণ করতে পারে না, শুধুমাত্র সিভিল বিমানেই অভিবাসীদের কলম্বিয়ায় আসতে দেওয়া হবে। অভিবাসীদের সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদার সাথে আচরণ করা উচিৎ।' প্রেসিডেন্ট পেট্রো বলেন, 'কলম্বিয়ায় ১৫ হাজার ৬৬০ জন আমেরিকান অবৈধভাবে বসবাস করছেন।'
প্রসঙ্গত, এর আগে মেক্সিকোও অভিবাসী পূর্ণ আমেরিকান সামরিক বিমানগুলি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল। পরে কলম্বিয়া তাঁর নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে হন্ডুরাসে একটি রাষ্ট্রপতির বিমান পাঠানোর ঘোষণা দেয়। কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি বলেছেন যে, তিনি অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাঁর নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছেন।
No comments:
Post a Comment