রিয়া ঘোষ, ০৪ ফেব্রুয়ারি : পেঁয়াজের ক্ষেত্রে বেগুনি দাগ রোগ একটি প্রধান সমস্যা। এই রোগ পাতা এবং কাণ্ডকে প্রভাবিত করে, যার ফলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। রোগের তীব্রতা কমাতে এবং ফসলের গুণমান বজায় রাখতে রোগের কার্যকর ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
রোগের লক্ষণ
পাতার দাগ: প্রথমে ছোট, জলে ভেজা, হালকা হলুদ দাগ দেখা যায়। এই দাগগুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং বাদামী বা বেগুনি রঙের হয়ে যায়। চারপাশে একটি হলুদ বৃত্ত তৈরি হয়।
পাতা ঝলসানো: তীব্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে পাতা শুকিয়ে যায়। কাণ্ডও আক্রান্ত হতে পারে।
কন্দের বিকাশ ব্যাহত হয়: পাতা অকাল শুকিয়ে গেলে কন্দের বিকাশ ব্যাহত হয়, ফলে উৎপাদন কমে যায়।
বেগুনি ব্লোচ রোগের বিস্তার
এই রোগটি মূলত হাওয়া, সংক্রামিত উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ এবং আর্দ্রতার কারণে ছড়িয়ে পড়ে। অনুকূল অবস্থা, যেমন: উচ্চ আর্দ্রতা (৮০-৯০%), ১৮-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাত বা প্রচুর সেচ, রোগের বিস্তারকে ত্বরান্বিত করে।
রোগ ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা
১. কৃষির বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা
ফসল আবর্তন অনুশীলন করুন: অন্যান্য ফসলের সাথে আবর্তন করে পেঁয়াজ চাষ করুন।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ক্ষেত থেকে পুরাতন উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ অপসারণ করুন। এগুলোই রোগের প্রধান উৎস।
নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা: জমিতে জল জমে থাকতে দেবেন না।
সুষম সার ব্যবহার: নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশ সুষম পরিমাণে ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
২. প্রতিরোধী জাত নির্বাচন
নির্দিষ্ট এলাকার জন্য সুপারিশকৃত রোগ প্রতিরোধী জাত নির্বাচন করুন। ‘অ্যাগ্রিফাউন্ড ডার্ক রেড’ এবং ‘অর্ক কল্যাণ’-এর মতো প্রতিরোধী পেঁয়াজের জাতগুলি রোগের বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করে।
৩. জৈবিক ব্যবস্থাপনা
ট্রাইকোডার্মা এসপিপি। জৈব-এজেন্ট ব্যবহার করুন যেমন। ট্রাইকোডার্মা বেগুনি দাগ রোগের জীবাণু নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
নিমল (নিম তেল): ৫% নিমল স্প্রে করুন।
গোবরের স্লারি: জৈব সারের ব্যবহার গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৪. রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা
রোগের প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়ে, নিম্নলিখিত রাসায়নিক ছত্রাকনাশক ব্যবহার করুন যেমন ২.৫ গ্রাম ম্যানকোজেব ৭৫ WP এক লিটার জলে দ্রবীভূত করে অথবা ১ মিলি প্রোপিকোনাজল ২৫ EC স্প্রে করুন। এটি এক লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করুন।
এক লিটার জলে ২ গ্রাম ক্লোরোথালোনিল নামক ছত্রাকনাশক মিশিয়ে স্প্রে করুন। ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে দুবার স্প্রে করুন।
৫. সেচ ব্যবস্থাপনা
সকালে ড্রিপ সেচ ব্যবহার করুন।
পাতার উপর দিয়ে সেচ (স্প্রিঙ্কলার) এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি পাতায় আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে রোগ বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধের টিপস
মাঠ পর্যবেক্ষণ: প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করে রোগ ব্যবস্থাপনা শুরু করুন।
বীজ শোধন: বপনের আগে বীজকে থিরাম বা ক্যাপ্টান (২-৩ গ্রাম/কেজি বীজ) দিয়ে শোধন করুন।
উদ্ভিদ সুরক্ষা: ৩০-৩৫ দিন বয়সী ফসলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন।
জমির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ: আগাছা এবং রোগ সৃষ্টিকারী উপাদান নিয়ন্ত্রণ করুন।
No comments:
Post a Comment