প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৬:০০:০২ : গত ১০ বছর ধরে, পৃথিবী প্রতি দুই ঘন্টা অন্তর অন্তর মহাকাশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রহস্যময় রেডিও সংকেত পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এই সংকেতগুলির উৎস খুঁজে পেয়েছেন, এবং এই উৎসটি একটি অনন্য বাইনারি সিস্টেম, যার মধ্যে একটি লাল বামন তারা এবং একটি সাদা বামন তারা রয়েছে। এই সিস্টেমটি পৃথিবী থেকে ১,৬০০ আলোকবর্ষ দূরে উর্সা মেজর নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই রেডিও সংকেতগুলি একটি বাইনারি সিস্টেম থেকে আসছে, যেখানে একটি লাল বামন তারা এবং একটি সাদা বামন তারা একে অপরের চারপাশে ঘুরছে। এই দুটি তারার চৌম্বক ক্ষেত্র একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার ফলে দীর্ঘ রেডিও সংকেত উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়াটি এতটাই নিয়মিত যে প্রতি ১২৫ মিনিটে পৃথিবীতে একটি সংকেত পৌঁছায়, যেমন একটি বিশাল মহাজাগতিক ঘড়ি। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর আইরিস ডি রুইটার ২০২৪ সালে নেদারল্যান্ডসের একটি রেডিও টেলিস্কোপ থেকে তথ্য অধ্যয়ন করার সময় এই সংকেতগুলি আবিষ্কার করেন। তারা লো ফ্রিকোয়েন্সি অ্যারে (LOFAR) টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ২০১৫ সালের একটি সংকেত খুঁজে পেয়েছে এবং একই অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে আরও ছয়টি সংকেত খুঁজে পেয়েছে। এই সংকেতগুলি কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এবং নিয়মিত বিরতিতে আসছিল।
এই সংকেতগুলি 'ফাস্ট রেডিও বার্স্ট' (FRB) থেকে আলাদা কারণ FRB গুলি মিলিসেকেন্ডে শেষ হয়, যেখানে এই সংকেতগুলি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং তাদের শক্তিও কম থাকে। এই বাইনারি সিস্টেমটি অধ্যয়ন করার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি বৃহৎ অপটিক্যাল টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছিলেন। প্রথমে কেবল একটি তারা দৃশ্যমান ছিল, কিন্তু তথ্য থেকে দেখা গেছে যে এটি একটি লাল বামন তারা যা একটি সাদা বামন তারার মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা টানা হয়েছিল।
শ্বেত বামন নক্ষত্র হলো মৃত নক্ষত্র যাদের জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে এবং তাদের কেবল উত্তপ্ত, ঘন কেন্দ্র অবশিষ্ট রয়েছে। এই তারাটি এতটাই ক্ষীণ যে সাধারণ টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যায় না। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে যখন এই দুটি তারা একে অপরের চারপাশে ঘুরতে থাকে, তখন তাদের চৌম্বক ক্ষেত্র একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং রেডিও তরঙ্গ তৈরি করে। এই তরঙ্গগুলি ১,৬০০ বছর পর পৃথিবীতে পৌঁছায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে আরও রহস্যময় রেডিও সংকেত বুঝতে সাহায্য করবে। অন্যান্য বাইনারি সিস্টেমও থাকতে পারে যারা একই রকম সংকেত পাঠাচ্ছে। এই গবেষণা আমাদের গ্যালাক্সিতে উপস্থিত শক্তির উৎসগুলি বুঝতেও সাহায্য করবে।
No comments:
Post a Comment