প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৪:০১ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪১টি দেশের উপর ব্যাপক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা বিবেচনা করছেন। এই প্রস্তাবিত নীতি বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং মায়ানমারের মতো দেশগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। এই নীতিটি ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের জারি করা একটি নির্বাহী আদেশের অংশ, যেখানে বিদেশী নাগরিকদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা তল্লাশি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। নির্দেশে বেশ কয়েকজন মন্ত্রিপরিষদ কর্মকর্তাকে ২১ মার্চের মধ্যে এমন দেশগুলির একটি তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেখানে অপর্যাপ্ত পরীক্ষা এবং স্ক্রিনিং পদ্ধতির কারণে ভ্রমণ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে সীমাবদ্ধ করা উচিত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যদিও তালিকাটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি এবং পরিবর্তনগুলি সম্ভব, তবে এর জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সম্মতি ছাড়াও প্রশাসনের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
প্রথম গ্রুপ (লাল তালিকা): প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ১১টি দেশের একটি "লাল" তালিকা রয়েছে যার নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তালিকায় আফগানিস্তান, ভুটান, কিউবা, ইরান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনিজুয়েলা এবং ইয়েমেন রয়েছে।
দ্বিতীয় গ্রুপ (কমলা তালিকা): সম্পূর্ণ বিধিনিষেধ ছাড়াও, প্রস্তাবটিতে ১০টি দেশের একটি "কমলা" তালিকাও দেওয়া হয়েছে যেখানে ভ্রমণ সীমাবদ্ধ থাকবে কিন্তু সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হবে না। বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, হাইতি, লাওস, মায়ানমার, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান এবং তুর্কমেনিস্তানের মতো দেশের নাগরিকদের কঠোর যাচাই-বাছাই পদ্ধতি এবং বাধ্যতামূলকভাবে ব্যক্তিগত ভিসা সাক্ষাৎকারের মুখোমুখি হতে হবে। এই দেশগুলির ধনী ব্যবসায়ী ভ্রমণকারীদের এখনও প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতে পারে, তবে অভিবাসী এবং পর্যটন ভিসাধারীদের কঠোর তদন্তের আওতায় আনা হবে।
তৃতীয় গ্রুপ (হলুদ তালিকা): খসড়া প্রস্তাবে ২২টি দেশের একটি "হলুদ" তালিকাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাদের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কথিত নিরাপত্তা ঘাটতিগুলি সমাধান করার জন্য ৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এই দেশগুলিতে মূলত আফ্রিকান এবং ক্যারিবিয়ান দেশগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে - অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বেনিন, বুর্কিনা ফাসো, ক্যামেরুন, কেপ ভার্দে, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ডোমিনিকা, নিরক্ষীয় গিনি, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া, মালাউই, মালি, মৌরিতানিয়া, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সাও টোমে ও প্রিন্সিপে, ভানুয়াতু এবং জিম্বাবুয়ে।
এই প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে পারে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি, বিশেষ করে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মায়ানমার এবং ভুটানের উপর। সূত্র মতে, সম্পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আফগানিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে, অন্যদিকে পাকিস্তানকেও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর ফলে এই দেশগুলির নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। আফগানিস্তানের শরণার্থী এবং বিশেষ অভিবাসী ভিসা (SIV) ধারকদের উপর এর বড় প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর। তবে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই SIV ধারকদের নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এই প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে (২০১৭) কার্যকর করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অনুরূপ, যা "মুসলিম নিষেধাজ্ঞা" নামেও পরিচিত ছিল। সেই সময় সাতটি মুসলিম প্রধান দেশের ভ্রমণকারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বেশ কিছু সংশোধনীর পর ২০১৮ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক অনুমোদিত হয়। তবে, জো বাইডেন ২০২১ সালে তার মেয়াদের শুরুতে এটি বাতিল করে দেন। এখন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে, এই নীতি আবারও কঠোর আকারে সামনে আসছে, যার উদ্দেশ্যও বলা হচ্ছে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করা।
এই খবরের পর, আন্তর্জাতিক ছাত্র এবং প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে গেছে। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় "আদর্শিক যাচাই" আরোপ এবং "বিপজ্জনক চরমপন্থীদের" যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ রোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর আগেও অনেক আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিল। এটি বিশেষ করে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মতো দেশ থেকে আগত শিক্ষার্থী এবং কর্মীদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
যদিও এই তালিকাটি এখনও চূড়ান্ত নয় এবং পরিবর্তন সম্ভব, যদি এটি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক অভিবাসন নীতির অংশ হবে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এটি কেবল ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির সাথে আমেরিকার সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে না বরং বিশ্বব্যাপী মানবিক সংকটকে আরও গভীর করতে পারে।
No comments:
Post a Comment