উত্তর ২৪ পরগনা, ২১ মার্চ ২০২৫, ১৫:৪৫:০০: বয়স সবে ৩০ পার হয়েছে। বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন তিনি। তবে, ছুটিতে বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে করে দূরদূরান্তে ঘুরতে যাওয়া ছিল তাঁর নেশা। সদ্য বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে করে অরুণাচলপ্রদেশ বেড়াতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু বাইক রাইডের নেশায় এবার তাঁর 'কাল' হল। হোলির দিন বন্ধুদের সঙ্গে বাইক রাইড করে বারাসত থেকে সিকিমে বেড়াতে গিয়ে গ্যাংটকে ড্রাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু হল বারাসতের যুবক রোহন ঘোষের। সেইসঙ্গে বাইক দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন রোহনের এক বন্ধুও। পরিবারের একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পরিবার সহ প্রতিবেশীরাও। বৃহস্পতিবার রাতে মৃত রোহনের দেহ আনা হয় বারাসতের বাড়িতে। একমাত্র ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে মুহুর্তে মুহূর্তে জ্ঞান হারাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।
জানা গিয়েছে, রোহন ঘোষের বাড়ি বারাসতের নবপল্লির লটারি কালীবাড়ি এলাকায়। কয়েকবছর আগে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে। দুই বোন ও মাকে নিয়ে নবপল্লিতে একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন রোহন, একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। আর বাইক রাইড করে দূরদূরান্তে ঘুরতে যাওয়া ছিল রোহনের একমাত্র নেশা। এই নেশার টানে বন্ধুদের সঙ্গে এর আগেও ঘুরতে গিয়েছিলেন বহু দূরে। এবার তাঁদের গন্তব্য ছিল সিকিমের গ্যাংটক। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ মার্চ, দোলের দিন সকালে পাঁচজন বন্ধুর সঙ্গে বারাসত থেকে বাইকে করে রোহন সিকিমের উদ্দেশ্যে রওনা দন। সকলেরই নিজস্ব বাইক ছিল। কিন্তু, রোহনের বাইক সিকিম সরকারের অনুমতি ছিল না। তাই, শিলিগুড়ি পর্যন্ত নিজের বাইকে করেই গিয়েছিলেন রোহন। আর শিলিগুড়ির একটি গেষ্ট হাউসে নিজের বাইক রেখে এক বন্ধুর বাইকে করেই গ্যাংটকে পৌঁছছিলেন রোহনরা।
মঙ্গলবার সকালে গ্যাংটক থেকে বন্ধুর বাইকে করে একটি পর্যটনস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। বন্ধুর বাইকের পিছনে বসেছিলেন রোহন। গ্যাংটকের একটি চেকপোস্ট সংলগ্ন এলাকায় ঘটে যায় দুর্ঘটনা। পাহাড়ি রাস্তায় বাঁক ঘোরার সময় পিছনের দিক থেকে আসা একটি ডাম্পার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রোহনদের বাইকে ধাক্কা মারে। বাইক থেকে দু’জনেই রাস্তায় ছিটকে পড়ে যান, ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট হয় রোহন। তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা সেনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোহনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রোহনের বন্ধু চিকিৎসাধীন রয়েছেন সেখানেই।
দুর্ঘটনার পরেই স্থানীয় পুলিশ যোগাযোগ করে রোহনের পরিবারের সঙ্গে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে জ্ঞান হারাচ্ছেন মা শাশ্বতী ঘোষ-সহ পরিবারের লোকজন। ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে রোহনের দেহ পেয়েছেন পরিবার। এদিনই গ্যাংটক থেকে শিলিগুড়িতে এসেছেন তাঁরা। আর শিলিগুড়ি থেকে বিমানে করে বৃহস্পতিবার রাতেই রোহনের দেহ নিয়ে বারাসতের বাড়িতে ফিরেছেন তাঁরা।
এই নিয়ে মৃতের মামা সরসিজ দাশগুপ্ত বলেন, "খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল রোহন। বেড়াতে যেতে ভালোবাসত। ভাগ্নের উপার্জনের উপরই নির্ভর ছিল সংসারটা। ওর দুটো ছোট বোন রয়েছে। তাঁরা পড়াশোনা করে। বাইক রাইডের নেশাটাই এভাবে 'কাল' করবে বুঝতে পারিনি। ওদের দুজনের মাথায় হেলমেট ছিল। কিন্তু চাকায় পিষ্ট হয়ে ভাগ্নের প্রাণ অকালে চলে গেল। গোটা পরিবারটা এখন অসহায় হল।"
No comments:
Post a Comment